কেন সরানো যায়নি পুরান ঢাকার কেমিক্যালের গুদাম?

ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকান্ডে ৭০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর পর পুরনো ঢাকা থকে রাসায়নিক পদার্থের গুদামগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেবার কথা আবারো আলোচনায় এসেছে।

কিন্তু আগেকার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে অনেকেই বলছেন, এখন এ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কিছুদিন পরই বিষয়টি হয়তো আর আলোচনায় থাকবে না, গুদামগুলো সরিয়ে নেবার প্রক্রিয়াও যাবে থেমে – ঠিক যেমনটা আগে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১০ সালে নিমতলী অগ্নিকান্ডের পর রাসায়নিক কারখানাগুলো সরিয়ে নেবার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা রাজি না হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি।

অবশ্য ব্যবসায়ীরা এ কথা স্বীকার করেন না। তারা বলেন, তারা পুরোনো ঢাকা থেকে সরে যেতে রাজি আছেন। পরিবেশকর্মীরা বলেন, আসলে সরকারই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন – বুধবার তাদের দেখতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেমিক্যাল গুদামের জন্য ঢাকার পাশেই কেরানীগঞ্জে একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

“সেখানে (কেরানীগঞ্জে) আমরা খুব আধুনিক গোডাউন তৈরি করে দিতে চাচ্ছিলাম, বহুতল ভবন করে, যেখানে কেমিক্যালগুলি সুরক্ষিত থাকবে। যেহেতু মালিকরা রাজী হন নাই, যার জন্য ওটা আর কার্যকর করা যায় নাই” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

পুরনো ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে দেখা গেল, যেসব বাড়ির মালিক কেমিক্যাল কিংবা নানা দাহ্য পদার্থের গুদাম বা দোকান ভাড়া দিয়েছেন, তাদের অনেকেই সে বাড়িতে থাকেন না। সুতরাং সে বাড়ি থেকে যত বেশি সম্ভব ভাড়ার টাকা তুলে আনাটাই তাদের লক্ষ্য থাকে।

এ নিয়ে স্থানীয় বাড়ির মালিকদের মধ্যেও নানা ধরণের দ্বন্দ্ব আছে।

স্থানীয় এক বাড়ির মালিকের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার শীলা বিষয়গুলো নিয়ে নিজের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। “আমাদের সমস্যার সমাধান কে করবে? টাকার জন্য ওনারা কেমিক্যাল গোডাউন ভাড়া দেয়। ওদের কারণে আমরা শান্তিতে নাই। এটা কি সমাধান হবে না কখনোই? এটার সমাধান আমাদের সরকারকেই করতে হবে” বলছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বারবার অভিযান চালিয়েও এসব রাসায়নিকের গুদাম সরানো সম্ভব হয়নি।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা দাবী করছেন, জায়গা পেলে এখন পুরনো ঢাকার অলি-গলি থেকে সরে যেতে তাদের আপত্তি নেই।

পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, একটি কাজ আট বছরে বাস্তবায়ন করতে না পারায় বোঝা যায়, সরকার আসলে বিষয়টি তেমন একটা গুরুত্বই দেয়নি এমনটাই বলছেন, পরিবেশবাদীরা।

কারণ, সরকার চাইলে আট বছরেও একটি কাজ করা সম্ভব নয়, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না অনেকের কাছেই।

পরিবেশবাদী আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, “এখানে মুখ্য দায়িত্ব সরকারের। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সে ব্যর্থ হয়েছে, আইন বাস্তবায়বায়নকারী সংস্থা হিসেবে সে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের জানমালের হেফাজত দেয়ার যে দায়িত্ব তার (সরকার), সেটা করতে সে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার যদি সচেষ্ট হতো, তাহলে এ গোডাউনগুলোকে সরিয়ে নেয়া যেত।”

বাংলাদেশে কোন দূর্ঘটনার পর সরকারের দিক থেকে প্রতিশ্রুতির কোন কমতি থাকে না। চকবাজার অগ্নিকান্ডের পর তাই হয়েছে।

রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেবার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেটি আদৌ গুরুত্বের তালিকায় থাকবে কিনা তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ আছে অনেকের মনে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top