রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের পর এবার ইতিহাস গড়ে জিতল শ্রীলঙ্কা

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল সফরকারী শ্রীলঙ্কা। শ্বাসরুদ্ধকর প্রথম ম্যাচ ১ উইকেটে জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্ট ৮ উইকেটে জিতে নেয় লংকানরা। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের নেতৃত্বে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো শ্রীলংকা। এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়লো লঙ্কানরা। ১৯৯৮ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এই নিয়ে ছয়টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। আগের পাঁচটি সিরিজই হেরেছে লংকানরা।
পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের দ্বিতীয় দিনই বল হাতে জ্বলে উঠেন শ্রীলংকার বোলাররা। তাই প্রথম ইনিংস থেকে ৬৮ রানের লিড পেয়েও প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১২৮ রানে গুটিয়ে যায়। জয়ের জন্য ১৯৭ রানের টার্গেট পায় লংকানরা। সেই টার্গেটে দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ৬০ রান করে শ্রীলংকা। ম্যাচ ও সিরিজ জিততে বাকী ৮ উইকেটে ১৩৭ রান প্রয়োজন পড়ে শ্রীলংকার।

তৃতীয় দিন মধ্যাহ্ন-বিরতির আগেই জয় নিশ্চিত করে ফেলেন শ্রীলংকার দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ওশাদা ফার্নান্দো ও কুশল মেন্ডিস। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন তারা।

ফার্নান্দো ১৭ ও মেন্ডিস ১০ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেন। ওয়ানডে স্টাইলে খেলে দু’জনই দ্রুতই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিলে জয়ের পথে ভালোভাবেই এগোতে থাকে শ্রীলংকাকে। শেষ পর্যন্ত ফার্নান্দো ও মেন্ডিসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৪৬তম ওভারে ও আড়াই দিনে দ্বিতীয় টেস্টে জয় নিশ্চিত করে শ্রীলংকা।
ফার্নান্দো ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৬ বলে অপরাজিত ৭৫ রান করেন। মেন্ডিসের ব্যাট থেকে আসে অনবদ্য ৮৪ রান। তার ১১০ বলের ইনিংসে ১৩টি চার ছিলো।

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষে এবার পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকা। যা শুরু হবে ৩ মার্চ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২২২ ও ১২৮, ৪৪.৩ ওভার (ডু-প্লেসিস ৫০*, আমলা ৩২, লাকমল ৪/৩৯)।
শ্রীলংকা : ১৫৪ ও ১৯৭/২, ৪৫.৪ ওভার (মেন্ডিস ৮৪*, ফার্নান্দো ৭৫, ওলিভার ১/৪৬)।
ফল : শ্রীলংকা ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : কুশল মেন্ডিস (শ্রীলংকা)।
সিরিজ সেরা : কুশল পেরেরা (শ্রীলংকা)।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো শ্রীলংকা।

হেটমায়ার-কটরেল নৈপূণ্য সিরিজে সমতা আনলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ব্যাট হাতে শিমরোন হেটমায়ারের সেঞ্চুরি ও বল হাতে বাঁ-হাতি পেসার শেল্ডন কটরেলের ৫ উইকেট শিকারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সমতা আনলো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতরাতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিবীয়রা ২৬ রানে হারায় ইংলিশদের। ফলে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা বিরাজ করছে।

ব্রিজটাউনে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় ইংল্যান্ড। প্রথম ওয়ানডেতে ৩৬১ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে পারার আত্মবিশ্বাসে আবারো প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত সফরকারীদের। ব্যাট হাতে নেমে ১২ ওভারে ৬১ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৩ রান করে ক্যাম্পবেল ফিরে গেলে প্রথম উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। ভালো শুরু করে ক্যারিয়ারের ৫০তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন গেইল। আগের ম্যাচে ১৩৫ রান করা গেইল এ ম্যাচে থামেন ৫০এ। তার ৬৩ বলের ইনিংসে মাত্র ১টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো।
দলীয় ৯৮ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হন বড় ইনিংস খেলতে। শাই হোপ ৩৩, ড্যারেন ব্রাভো ২৫, অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ৩ ও কার্লোস ব্রার্থওয়েট ১৩ রান করে আউট হন।

তবে এক প্রান্ত আগলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন হেটমায়ার। সপ্তম উইকেটে অ্যাশলে নার্সকে নিয়ে মাত্র ৩৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫২ রান যোগ করেন তিনি। ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হেটমায়ার। ২২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৮২তম বলে চতুর্থ সেঞ্চুরির স্বাদ পান তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৯ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৩ বলে অপরাজিত ১০৪ রান করেন হেটমায়ার। নার্স ১৬ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

জয়ের জন্য ২৯০ রানের টার্গেটে ভালো শুরু করতে পারেনি ইংল্যান্ড। ১০ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় তারা। জেসন রয় ২ ও জনি বেয়ারস্টো ০ রান করে কটরেলের বলে আউট হন। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রুট ৩৬ রানে থামলেও, দলকে ভালোভাবেই খেলায় ফেরান অধিনায়ক ইয়োইন মরগান ও বেন স্টোকস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের কোনরকম সুযোগ না দিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৯৯ রান যোগ করেন মরগান-স্টোকস। দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তারা।

হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজেদের ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেছিলেন মরগান-স্টোকস। তবে দু’জনই সত্তরের ঘরে থেমে যান। তাদের বিদায়ই বিপদ ডেকে আনে ইংল্যান্ডের। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৩ বলে ৭০ রান করে কটরেলের শিকার হন মরগান।

দলীয় ১৫৯ রানে মরগান ফিরে যাবার পর ইংল্যান্ডের আশা বাঁিচয়ে রেখেছিলেন স্টোকস। পঞ্চম উইকেটে জশ বাটলারকে নিয়ে ৬৯ রান যোগ করে দলকে লড়াইয়ে রাখেন স্টোকস। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭৯ রানে থামতে হয় তাকে। তার ৮৫ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
ইংল্যান্ডের লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতেই দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই পেসার কটরেল ও হোল্ডার। শেষ ডর্যন্ত ৪৭ দশমিক ৪ ওভারে ২৬৩ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। শেষদিকে বাটলার ৩৪, আদিল রশিদ ১৫ ও মঈন আলী ১২ রান করেন। ৯ ওভারে ৪৬ রানে ৫ উইকেট নেন কটরেল। ৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন কটরেল। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেটমায়ার।

গ্রেনাডায় আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top