ফিলিপাইনের দক্ষিণে মিন্দানাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বেশ কয়েকজন সাবেক বিদ্রোহী কমান্ডার শুক্রবার সেখানকার প্রশাসক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। এ সময় মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা মুরাদ ইব্রাহিম ও তার কয়েকজনক শীর্ষ কমান্ডারসহ অঞ্চল বাংসামোরোর ৮০ জন প্রশাসককে শপথ পাঠ করানো হয়।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে নিজে বাংসামোরোর মুসলিম নেতা মুরাদ ইব্রাহিমকে শপথবাক্য পাঠ করান এবং তাকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। নতুন মুসলিম স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রশাসকদের শপথ গ্রহণ এশিয়ায় দীর্ঘতম বিদ্রোহ অবসানে মাইলফলক হয়ে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
এর মাধ্যমে ফিলিপাইনের মুসলিম অধ্যুষিত বাংসামোরো অঞ্চলের শাসনভার আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানকার বিদ্রোহী নেতাদের হাতে তুলে দেয়া হলো। কয়েক দশক ধরে মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (এমআইএলএফ) ওই অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করে আসছিল।
গত জানুয়ারি মাসে ভোটাররা বাংসামোরো অঞ্চল গঠনের পক্ষে ভোট দেয়। এর পরই বাংসামোরোর দায়িত্ব তাদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ১৯৭০ দশক থেকে শুরু হওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিদ্রোহের অবসান হয়।
ওই চুক্তির অধীনে হাজার হাজার আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রায় ১২ হাজার যোদ্ধা শান্তি এই বছরের শুরুতে নিষ্ক্রিয় করা হয়। দুতার্তে বলেন, ‘আমরা সহিংসতার অবসান দেখতে চাই’। কয়েক দশক ধরে এ স্বাধীনতার লড়াইয়ে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট দুতার্তে এবং মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের (এমআইএলএফ) নেতা উভয়ই আশা করছেন চুক্তির ফলে মুসলমান অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য মিন্দানাওতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থান বন্ধ হবে। অনুষ্ঠানে এমআইএলএফ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য সদস্যদের নির্বাচিত করেন। দুতার্তে তাদেরও শপথ পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে দুতার্তে বলেন, ‘শান্তির এই পথ দীর্ঘ ও বন্ধুর হতে পারে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত একটা চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি তাতেই আমি কৃতজ্ঞ। আমাদের বেশির ভাগই এই হানাহানি, যা মিন্দানাওকে শেষ করে দিয়েছে তার একটা শেষ দেখতে পছন্দ করি। এই এতে অনেক প্রাণহানি হয়েছে।’
ফিলিপাইন, পশ্চিমা দেশগুলোর এবং গেরিলা কার্যকর মুসলিম স্বায়ত্তশাসনের এই প্রক্রিয়াটিকে অর্ধশতাব্দী ধরে চলে আসা স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের একটি প্রতিষেধক হিসেবে দেখছেন।
বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ভন আল হক এ উপলক্ষ্যে বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, আমরা যে স্বপ্নকে সামনে রেখে লড়াই করেছি, এখন তা পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ফলে এখন আর বন্দুক বহন করার বা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
মুরাদের এই অন্তর্বর্তী সরকার একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবে এবং আগামী ২০২২ সালে আঞ্চলিত পার্লামেন্ট ভোট হওয়ার আগ পর্যন্ত আইনও পাস করবে। মিন্দানাও অঞ্চলে একটি ভিন্ন মুসলমান রাষ্ট্র গঠনের দাবি নিয়ে ১৯৭০ দশকের দিকে আন্দোলন শুরু হয়। পরে বিদ্রোহীরা স্বায়ত্তশাসন দাবি করে।