কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তার শারীরিক সমস্যাগুলো বাড়ছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ তাই গত ১২ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা প্রদানের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এখনো তার চিকিৎসার ব্যাপারে আদেশ পাওয়া যায়নি।
আইনজীবীরা জানান, গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেন না। গত বুধবার অসুস্থতার কারণে তিনি শুয়ে ছিলেন, এ জন্য তাকে আদালতে আনা হয়নি। দুদকের আইনজীবী অবশ্য বলছেন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। এ জন্য দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় তাকে হুইল চেয়ারে করেই আদালতে হাজির করা হয়। আদালত চলাকালীন দেখা যায়, হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়ার পা থেকে কোমর পর্যন্ত সাদা কাপড়ে আবৃত ছিল। আদালত চলাকালীন তাকে পা নাড়াতেও দেখা যায় না। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে এবং আগামী ৩ মার্চ পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে তাকে হাজির করার কথা রয়েছে। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থতার কারণে নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করা হয়নি। তার আইনজীবীরা আদালতে বলেছিলেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। অসুস্থতার কারণে তিনি শুয়েছিলেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে জানিয়ে ছিলেন, ঘুমিয়ে থাকার কারণে খালেদা জিয়াকে আদালতে আনা হয়নি।
এ বিষয়ে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তার সাতজন ব্যক্তিগত চিকিৎসকের তালিকা আমরা আদালতে জমা দিয়েছি। গত বুধবার আদালত বলেছিলেন, হাইকোর্ট দুইজনের নাম কেটে ৫ জন চিকিৎসকের কথা বলেছেন। এরপর আমি দুইজন চিকিৎসকের নাম বাদ দিয়ে ৫ জনের তালিকা জমা দেই। আদালত বলেছেন, পরবর্তীতে আদেশ দেবো। তবে এখনো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আদেশ পাইনি। তিনি আরো বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ যখন তাকে আনতে যান তখন তিনি অসুস্থতার কারণে শুয়ে ছিলেন। এ জন্য তাকে আনতে পারেনি। খালেদা জিয়া এখন গুরুতর অসুস্থ। কারাগারে থাকার কারণে দিনে দিনে তার আগের সব সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে দ্রুত তার চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে আইনজীবীদের পরামর্শ দেন। ওই দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে আনার পর তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও কায়সার কামাল তার সাথে দেখা করেন। এ সময় খালেদা জিয়া তার অসুস্থতার কথা তাদের জানিয়ে চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করতে পরামর্শ দেন। এরপর খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে তার চিকিৎসা করানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি ওই দিন আদালতে বলেছিলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে তাকে আবার কারাগারে আনা হয়। বর্তমানে ওনার শারীরিক অবস্থা ভালো না। ওনার শারীরিক সমস্যাগুলো বাড়ছে। তার চিকিৎসার ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে। এখন তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ। তাই আমরা ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা আবারও তাকে চিকিৎসা প্রদানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করছি। জবাবে আদালত বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশটি আদালতে দাখিল করেন। পরে আদেশ দেবো।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি জানিয়ে ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি চিঠি দেয়া হয়েছে। আদালতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টের আদেশে তাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) নেয়া হয়। আইনজীবীদের অভিযোগ তার চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে নাইকো মামলায় আদালতে হাজির করতে তাকে আবার কারাগারে আনা হয়।