পাঁচ বছর আগে নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জমায়াতের সহিংসতার পরও দেশের উন্নয়ন করায় জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আবারো আস্থা রেখেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সে জন্য তিনি জনগণের সেই আস্থা আর বিশ্বাসের মর্যাদা দেয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেয়া শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরপর তিনবার সরকারে এসেছি। সরকারে আসা অর্থাৎ জনগণের যে আস্থা, বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি এই বিশ্বাসের মর্যাদা আমাদের দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা শুরু করি। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টা স্কুল পোড়ায় খালেদা জিয়ার নির্দেশে, তার মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে। হাজার হাজার গাড়ি এবং মানুষ পোড়ানো হয়। এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। কর্তব্যরত ইঞ্জিনিয়ারকে আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৯ জন সদস্য, পুলিশের সদস্য পর্যন্ত এদের হাতে নিহত হয়।
‘তারপরও তারা ঠেকাতে পারেনি। জনগণ আমাদের ভোট দেয়, আমরা সরকার গঠন করি। একটানা ১০ বছর সরকার গঠন করে আমরা উন্নয়নটা করেছি বলেই আজকে উন্নয়নটা দৃশ্যমান। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ একটা সম্মান পেয়েছে, একটা মর্যাদা পেয়েছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নবাণিজ্য, দলের সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থীদের মনোনয়ন না দেয়া, অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করা, যুদ্ধাপরাধীদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে দেয়ায় বিএনপি থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের নমিনেশন অকশনে দেয়। যে যত টাকা দিচ্ছে সে নমিনেশন পাচ্ছে। যে টাকা দিতে পারছে না তার নমিনেশন ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছে। যারা সিট অকশনে দেয় এবং অনেকগুলো সিট যাদেরকে দিলে জিতত, যেটা আমরা জানি, তারা পায়নি।’
‘কেউ কেউ এসে আমাকে নিজেও বলেছে যে, লন্ডন থেকে ফোন করেছে- এত টাকা হলে নমিনেশন পাবে। যে টাকা দিতে পারেনি তার নমিনেশন হয়নি। আবার কাউকে কাউকে নমিনেশন দিয়েছে বিদেশে বসে। সে দেশে নাই, বিদেশে বসে নমিনেশন পেয়ে অ্যাম্বাসিতে গিয়েছে নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে।’
যারা নির্বাচন নিয়ে এই ধরনের ব্যবসা করেছে তারা জয়ের স্বপ্ন কিভাবে দেখে- প্রশ্ন রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের চরিত্রটা কী আজকে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলি, আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করি।’
‘চৌদ্দ শ’ সাল যখন আমরা উদযাপন করতে চাই অর্থাৎ একটা শতাব্দী থেকে আরেকটা শতাব্দীতে আমরা পদার্পণ করছি। তখন আমরা বিরোধী দলে। খালেদা জিয়া তখন প্রাইম মিনিস্টার। আমাদের সেই চৌদ্দ শ’ সাল তিনি বরণ করতে দেবেন না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা অনুষ্ঠান করব, সেখানে পুলিশ দিয়ে বাধা দিলো, ঘেরাও করে রাখল।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালি তো বাধা মানে না। বাধা মানতে জানে না। স্রোতের মতো মানুষ সেখানে ঢুকে গেল। ট্রাকেই মঞ্চ হলো। খালেদা জিয়া দাবায় রাখতে পারে নাই। আমরা চৌদ্দ শ’ সাল বরণ করে নিয়েছিলাম, যা আমাদের ভাষা, কৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বুধবার পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান প্রমুখ।