ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সামরিক, কূটনৈতিক ও খেলাধূলা ছাড়িয়ে এবার পৌছেছে পানি পর্যন্ত। ভারতের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তারা পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত তিনটি নদীর পানি বন্ধ করে দেবে।
বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় পাসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, পাকিস্তানে তিনটি নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুক্রবার সেটাই আরও স্পষ্ট করে গডকড়ী জানালেন, তিন নদীর পানি বন্ধ করে ভারতের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ভারতের এই হুমকি পরোয়া করে না। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলির রিপোর্ট অনুযায়ী, মুখে কার্যত নিরুত্তাপই ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের প্রথম সারির দৈনিক ‘ডন’- এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ নিয়ে বিরোধিতা করবে না ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা শুমাইলকে উদ্ধৃত করে‘ডন’-এর ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এ নিয়ে পাকিস্তান সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই। আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি যদি তিন নদীর পানি পাকিস্তানের দিকে আসা বন্ধ করে ভারতে ঘুরিয়ে দেওয়া সমর্থন করে, তাহলে তাদের কোনও আপত্তি নেই।
সিন্ধুর পানি বণ্টন চুক্তির কথাই বলতে চেয়েছেন পাক আমলা। সিন্ধুর উপত্যকায় মোট ৬টি নদী রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তিনটিই ভারতের দিক থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত। এর মধ্যে পূর্ব দিকে রয়েছে ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশা। পশ্চিম দিকের তিনটি নদী হল সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগা(ভারতীয় নাম)। এই ছয়টি নদীর পানিবণ্টন নিয়েই ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মধ্যে চুক্তি হয়। সেটাই সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিমের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলম এবং চন্দ্রভাগার পানি ব্যবহারের অধিকার রয়েছে পাকিস্তানের। এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে কোনও ভাবেই ওই তিন নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না ভারত। অন্য দিকে পূর্ব দিকের ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশা নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার ভারতের।
গডকড়ীর লক্ষ্য এই ভারতের ভাগের উপরেই। অর্থাৎ ভারতের ব্যবহারের পরে ইরাবতী, শতদ্রু এবং বিপাশার পানি ভারতের ব্যবহারের পরেও যা অবশিষ্ট থাকবে, তা কোনও ভাবেই পাকিস্তানে প্রবাহিত হতে দেওয়া যাবে না। বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ ঘুরিয়ে পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে যেখানে পানির সঙ্কট, সেই এলাকায় ব্যবহার করা যায় কী ভাবে, তা নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে গডকড়ীরের মন্ত্রণালয়। শুক্রবারও মন্ত্রী জানিয়েছেন,‘মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত হলেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানানো হবে এবং সবুজ সঙ্কেত পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।