ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু?

কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের প্রতিরোধের আশঙ্কায় যে কোনো চরম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তান। এমনই খবর দিয়ে ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ভারতীয় চাপের মুখে পাকিস্তান যাতে কোনোভাবেই মাথা না নোয়ায়, ইমরান খানের সরকারকে সেই কথাই বলেছে জইশ প্রধান মাসুদ আজহার।

টাইমস অব ইন্ডিয়া দাবি করেছে, পাকিস্তান যে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে, তার প্রমাণ তারা পেয়েছে তাদের হাতে আসা দুটি সরকারি নথি থেকে। একটি বালোচিস্তানের পাকিস্তান সেনাঘাঁটির নথি ও অপরটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের স্থানীয় প্রশাসনকে দেয়া একটি নোটিশ। ভারতের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিলানি হাসপাতালকে চিঠি দিয়ে জরুরি অবস্থার জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছে কোয়েটার পাকিস্তান সেনাঘাঁটি।

পত্রিকাটির খবরে প্রকাশ, হেডকোয়ার্টার্স কোয়েটা লজিস্টিকস এরিয়ার ফোর্স কম্যান্ডার জিলানি হাসপাতালের আবদুল মালিককে চিঠিতে লিখেছেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধ হলে সিন্ধ ও পাঞ্জাবের সাধারণ ও সেনা হাসপাতাল থেকে আহত জওয়ানরা আসতে পারেন। প্রাথমিক চিকিত্‍‌সার পর সেই হাসপাতাল থেকে তাদের বালোচিস্তানের সিভিল হাসপাতালে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যতক্ষণ বেড থাকবে ততক্ষণ এটা করা হবে।’

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে যে, প্রদেশের সব সেনা ও সাধারণ হাসপাতালে সবরকম মেডিক্যাল সহযোগিতার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে সেনা হাসপাতালের পাশাপাশি সাধারণ হাসপাতালেও ২৫ শতাংশ আসন আহত সৈনিকদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখার নির্দেশ দেয়া হবে।

এদিকে, পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ভারত। পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে তারা ব্যবহার করতে পারেন পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি। এসব নদীর পানি আর পাকিস্তান যেন না যেতে পারে সে ব্যবস্থা করার চিন্তাই করছে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ভারতীয় কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গডকারি এদিন জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাকিস্তানকে নদীর পানি বণ্টন করা হবে না। নদীর গতিমুখ পাঞ্জাব ও কাশ্মিরের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হবে। যাতে আমাদের লোকজন পানি পায়। কাশ্মিরে পানি পৌঁছতে ইরাবতী নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। বাড়তি পানি বিপাশা হয়ে পাঞ্জাবে যাবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণের প্রেক্ষিতেই মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত। হামলায় ভারতের ৪৯ আরপিএফ জওয়ান শহীদ হয়েছেন।

সিন্ধু পানিচুক্তি অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতেই ন্যস্ত। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ওই চুক্তি সই হয়েছিল। ভারতের তত্‍‌কালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বদেশীয় তিনটি নদী বিপাশা, রবি ও শতদ্রুর নিয়ন্ত্রণ ভারতকে দেয়া হয়েছিল। অন্য দিকে পশ্চিমের তিনটি নদী— সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং ঝিলামের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানকে দেয়া হয়।

এদিকে, পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মির সরকার সীমান্তপারের স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এলাকাবাসীর জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করতে হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য প্রতিরোধের কথা জানিয়ে তাদের সতর্ক করতে হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top