আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবন দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার আদায় করেছে। এই ত্যাগ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ফলে শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সারা বিশ্বে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সমাদৃত।
তিনি আরো বলেন, বাংলা এখন পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। ভাষাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মানচিত্রে একটি জাতির অভ্যুদয় হয়েছে, সেই দেশটিও বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলন ও অর্জন বিশ্ব দরবারে জাতিকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই অর্জন আজ নানা কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমকে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হেনস্থা করা হয়েছে। ফলে তাকে কারা প্রকোষ্ঠে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
অন্যান্য ভাষা সৈনিক, ভাষা শহীদদের পরিবারের প্রতিও হচ্ছে দারুণ অবহেলা। ভাষা সৈনিকদের আহবান ও দাবিকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিজাতীয় সংস্কৃতির আমদানী ও প্রসার করে বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত অপমান করা হচ্ছে। যে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্যে তরুণ-যুবক ছাত্ররা জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে এসে পুলিশের গুলিতে জীবন আত্মদান করেছিল সেটি আজ কতিপয় পরশ্রীকাতরের নগ্ন থাবায় ক্ষত-বিক্ষত।
বিকৃতিকারীরা জেনে বুঝে ভিনদেশী ভাষার সাথে আমার মায়ের ভাষার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একটি জগাখিচুড়ি ভাষার জন্ম দেয়ার অপচেষ্টা করছে। বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাবে আগামী প্রজন্মের বিরাট একটি অংশ আজ হিন্দি ভাষায় কথা বলা ও চালচলনে অভ্যস্থ হয়ে উঠছে। এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। এভাবে অপসংস্কৃতির জোয়ার বইতে থাকলে অচিরেই জাতি সত্ত্বার মূল চেতনা হারিয়ে ফেলবে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। পরিপূর্ণ ভাষানীতি ও ভাষা আইন প্রণয়ণ করা সময়ের দাবি। সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা শুদ্ধ ভাবে শেখা ও বলার জন্য নীতিমালা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ভাষার বিকৃতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসচেতনতা কিংবা ইচ্ছা করে ভাষার অপপ্রয়োগ পরিহার করতে হবে।
আদালতের কার্যক্রমে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে। ভাষা প্রতিযোগিতা আয়োজন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থী সমাজকে ব্যাপকভাবে ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন বাধ্যতামূলক করতে হবে। একইভাবে যার যার অবস্থান থেকে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আত্মসম্মান রক্ষায় ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সংস্কৃতির লালন ও বিকাশ ঘটাতে হবে। তাহলেই শহীদদের আত্মত্যাগ পূর্ণতা পাবে।
ঢাকা মহানগরী পূর্ব
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের কবর জিয়ারত করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা। প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক রাজিফুল হাসান বাপ্পীর নেতৃত্বে শাখার নেতৃবৃন্দ কবরের পাশে দোয়া মুনাজাত করেন। এ সময় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরী পশ্চিম
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তঃথানা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা। টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি ছিলেন কেন্দ্রীয় বির্তক সম্পাদক আ স ম শাহজালাল। এসময় মহানগর সভাপতি জুবায়ের হোসেন রাজনসহ শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর মহানগরী
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে ছাত্রশিবির রংপুর মহানগর শাখা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাখা সভাপতি সামিউল ইসলাম। এসময় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ
আন্তর্জাতিরক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রশিবির কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ শাখা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক কামরুল হাসান। এসময় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রশিবির কক্সবাজার জেলা শাখা। এতে শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে।
চাঁদপুর শহর
শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে ছাত্রশিবির চাঁদপুর শহর শাখা। এতে শহর সভাপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞপ্তি