‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন’। এই প্রবাদবাক্য ধরে রাজনীতির ময়দানে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের নজির কম নেই। এ বার সেই অভিযোগেই বিদ্ধ হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘‘পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার পর সারা দেশ যখন সিআরপিএফ সৈন্যদের মৃত্যুতে কাঁদছে, প্রধানমন্ত্রী তখন শুটিং করছিলেন’’— প্রমাণসহ এই অভিযোগ তুলে তীব্র আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। রীতিমতো তোপ দেগে দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘সারা বিশ্বে এ রকম প্রধানমন্ত্রী আর কোনো দেশে আছেন?’’ যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লজ্জাজনক অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস’।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী একটি প্রচারমূলক তথ্যচিত্রের শুটিং করছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার দিনও প্রায় দিনভর সেই তথ্যচিত্রের শুটিং হয়েছে উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট ন্যাশন্যাল পার্কে। পুলওয়ামা হামলা হয় দুপুর ৩টা নাগাদ। কংগ্রেসের অভিযোগ, সেই খবর পাওয়ার পরও সন্ধ্যা পর্যন্ত শুটিংয়েই ব্যস্ত ছিলেন মোদি। আগে থেকে শুটিংয়ের দিনক্ষণ নির্ধারিত থাকতেই পারে। কিন্তু এত বড় জঙ্গি হানার পরও প্রধানমন্ত্রী কী করে শুটিং করেন, তাই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। সুরজেওয়ালার অভিযোগ, ক্ষমতার লোভে মোদি রাজধর্ম পালন করছেন না।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা হয় ৩.১০ মিনিটে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে ওই তথ্যচিত্রের শুটিং করেছেন সন্ধ্যা ৬.৪০ পর্যন্ত। সারা দেশ সৈনিকদের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তখনও শুটিংয়ে ব্যস্ত।’’
স্থানীয় একাধিক সংবাদপত্রে মোদির প্রতি মিনিটের কার্যক্রম ছাপিয়েছে বলে উল্লেখ করে সেই সংবাদপত্রও সাংবাদিকদের দেখান সুরজেওয়ালা। এ নিয়ে মোদিকে সুরজেওয়ালার খোঁচা, ‘‘নিজেকে জাহির করতে তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন, করবেট পার্কে কুমিরদের মধ্যে সময় কাটাচ্ছিলেন মোদি। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের চিত্রগ্রাহকদের সঙ্গে চা-শিঙাড়া খাচ্ছিলেন। অথচ জওয়ানদের মৃত্যুতে দেশ খিদেই ভুলে গিয়েছিল।’’ ‘এটা ঘৃণ্য এবং লজ্জাজনক’, মন্তব্য সুরজেওয়ালার।
পুলওয়ামা হামলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এই দুঃসময়ে কারো দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা উচিত নয়। আবার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও বলেছিলেন, এই ইস্যুতে রাজনীতি করবে না কংগ্রেস। এ দিন সেই প্রসঙ্গ উঠতেই সুরজেওয়ালা টেনে আনেন ২৬/১১-র মুম্বই হামলার প্রসঙ্গ। সেই হামলার পর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ তাজ হোটেল গিয়েছিলেন তার অভিনেতা পুত্র রিতেশ দেশমুখ এবং পরিচালক রামগোপাল বর্মাকে নিয়ে। এ নিয়ে ব্যাপক পানিঘোলা হয়। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদিও তখন কংগ্রেসকে এক হাত নিয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এ দিন মোদিকে পাল্টা আক্রমণ করেন সুরজেওয়ালা।
বুধবারই অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘সৈনিকদের বলিদান বৃথা যাবে না। কারণ, ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি সরকার, কংগ্রেস নয়।’’ রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, কার্যত পুলওয়ামা নিয়ে বিজেপি সভাপতিই রাজনীতির শুরু করেছেন ওই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে। পরের দিনই তার জবাব দিলো কংগ্রেস। সুরজেওয়ালার জবাব দিতে এ দিনই সংবাদ সম্মেলন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পাল্টা হিসেবে এ দিন দিন রবিশঙ্কর প্রসাদ। তার পাল্টা তোপ, ‘‘এই রকম একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও নির্লজ্জ রাজনীতি করছে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লজ্জাজনক অভিযোগ তুলেছে। চেষ্টা করছে সেনার মনোবল ভেঙে দেওয়ার।’’
বুধবারই ভারত সফরে এসে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। মোদি দাবি করেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতের পাশেই রয়েছেন বিন সালমান। এই বিষয়েও এ দিন কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকেই সুরজেওয়ালার তোপ, ‘‘পাকিস্তানে দু’দিন সফর করে বিপুল আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন বিন সালমান। বলে এসেছেন, সৌদি পাকিস্তানের দুঃসময়ের বন্ধু। অথচ সেই বিন সালমানকেই মোদি বলতে পারেননি, জইশ-ই-মোহম্মদের মাথা মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণার জন্য চাপ দিক সৌদি আরব।’