কাশ্মিরে আত্মঘাতি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেটাঙ্গনেও। ভারতীয়দের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে আসছে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করার। সাবেক স্পিনার হরভজন সিং প্রথমে এই দাবি তুলেছন, ক্রমশই তার পক্ষে সায় দিয়েছেন সাধারণ দর্শক থেকে অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক। যদিও এই ধারনার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন দেশটির সাবেক তারকা ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার।
সুনীল গাভাস্কার মনে করেন, বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বয়কট করলে ভারতের জন্যই সেটি হবে একটি ‘পরাজয়’। তার চেয়ে তিনি চান দেশটির সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাতিল করে পাকিস্তানকে ‘শাস্তি’ দেয়া হোক।
আগামী ১৬ জুন ম্যানচেস্টারে বিশ্বকাপের লিগ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখী হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। সুনীল গাভাস্কার মনে করে ম্যাচ বয়কট করার অর্থ পাকিস্তানকে দুটি পয়েন্ট ছেড়ে দেয়া। তিনি বলেন, ‘ভারত যদি পাকিস্তানের সাথে না খেলে তাহলে কে জিতবে? ফাইনাল বা সেমি ফাইনালে কথা বাদই দিলাম, লিগ পর্বের ম্যাচ ছেড়েও দিলেও তো সেটিতে পাকিস্তান দুটি পয়েন্ট পাবে। তারাই জিতে যাবে।’
গাভাস্কার মনে করে তার চেয়ে মাঠের খেলায় পাকিস্তানকে হারিয়ে দিতে পারলেই সেটি হবে লাভজনক। এই লিটল মাস্টার বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমরা প্রতিবারই তাদের হারিয়েছি। আবারো সেটি করে দুটি পয়েন্ট বাগিয়ে নেয়া উচিত। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যাতে এই রেকর্ড ভেঙে অগ্রসর হতে না পারে।’
অবশ্য নিজের যুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি দেশ জনতার আবেগ অনুভূতির কথাও বিবেচনায় রেখেছেন ৮৬’র বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকা। বলেছন, ‘তবে আমি অবশ্যই দেশের পাশে আছি। সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তার পক্ষে আমার অবস্থান। দেশ যদি চায় পাকিস্তানের সাথে খেলবে না, আমি সেটাই সানন্দে গ্রহণ করবো’।
পাক-ভারত দ্বিপক্ষী ক্রিকেট সম্পর্ক স্থগিত হয়েছে আছে ২০১২ সাল থেকে। আর দেশ দুটি সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলেছে তারও ৫ বছর আগে ২০০৭ সালে। গাভাস্কার বলেন ‘(খেলা বয়কট) কি পাকিস্তানের ওপর কোন আঘাত? ভারতের বিপক্ষে কোন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ না খেলতে পারাটাই তাদের জন্য বড় আঘাত। কিন্তু কোন বহুজাতিক আসরে না খেললে (পরোক্ষ ভাবে) ভারতই তাদের কাছে হেরে যাবে। বিষয়টি আরো গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত। যদিও আমি বুঝতে পারছি মানুষের আবেগ কতখানি এ বিষয়ে’।
গাভাস্কার মনে করেন ম্যাচ ছেড়ে দিয়ে নয়, বরং মাঠের লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে ‘জবাব’ দেয়ার উচিত। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা তাদের সাথে না খেললে কি হবে? জানি যে, দুটি পয়েন্ট ছেড়ে দিলেও আমরা পরের রাউন্ডে যাওয়ার মতো শক্তিশালী দল। কিন্তু কেন আমরা তাদের হারিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করার চেষ্টা করবো না!”
জল্পনা কল্পনা চলছে যে বিষয়টি আইসিসিতে তুলে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করবে ভারত। কিন্তু সুনীল গাভাস্কার মনে করেন এই চেষ্টা বৃথা, এতে সফল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ‘বিসিসিআই চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। কারণ অন্য সদস্য দেশগুলো এই যুক্তি মেনে নেবে না। তারা বলবে, দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে তাদের না জড়াতে। কাজেই পাকিস্তানকে বিশ্বকাপের বাইরে রাখার চিন্তা সফল হবে না। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারাও মনে করছেন এভাবে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ থেকে সরিয়ে রাখতে পারা যাবে না।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসির সম্মেলনে বিষয়টি তুললেও কাজ হবে না বলে মনে করেন সাবেক এই ব্যাটসম্যান। একই সাথে তিনি পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ‘দ্রুত পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইমরানের সাথে সরাসরি কথা বলেও চান তিনি এ বিষয়ে। গাভাস্কার বলেন, ‘আমাকে সরাসরি ইমরান খানের সাথে কথা বলতে দিন। এই মানুষটি দারুণ এক ব্যক্তিত্ব। যে কী না আমার বন্ধুও। আমি তাকে বলতে চাই, আপনি যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন নতুন পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।’
পাকিস্তানের বিশ্বকাপী জয়ী অধিনায়কের উদ্দেশ্যে গাভাস্কার বলেন, আপনি বলছেন ভারতের আগে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কিন্তু কোন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি আপনাকে বলতে চাই, আপনারই এই ইস্যুতে এগিয়ে আসা দরকার। সীমান্ত পার হয়ে কেউ যাতে হামলা চালাতে না পারে সেটি নিশ্চিত করুন। তাদের ভারতের হাতে না হলেও জাতিসঙ্ঘের হাতে তুলে দিন। এই দুটি পদক্ষেপ আপনি নিন, দেখবেন ভারতও এগিয়ে আসবে।
গাভাস্কার বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখতে চায় সাধারণ জনগনও। ইমরান খানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আপনি আমার বন্ধু, ওয়াসিম(আকরাম) আমার বন্ধু, রমিজ(রাজা), শোয়েব(আখতার) আমার বন্ধু। দেশে কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই আমাদের দেখা হয় চমৎকার সময় কাটে। কাজেই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে আসুন।