গরুর কারণে দারুণ সমস্যায় ভারতের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন

পথচলা শুরুর কথা ছিল গতবছর৷ নাম ছিল ‘‌ট্রেন-‌১৮’। ক্রমাগত পিছিয়ে সেই ট্রেন চালু হলো ২০১৯-‌এ। নতুন নাম হলো ‘‌বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’‌।

পরদিন শনিবার ফেরার পথে উত্তরপ্রদেশের টুন্ডলা জংশন থেকে ১৫ কিমি দূরে রেললাইনের উপর থাকা একটি গরুর সঙ্গে ট্রেনটির ধাক্কা লাগে। এই ঘটনায় ট্রেনটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। ট্রেনের শেষ চারটি কোচে বিকট শব্দ শুরু হয় এবং সেখান থেকে ধোঁয়া ও জ্বালানির গন্ধ বের হতে শুরু করে। এছাড়া সবকটি কোচ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছি। ট্রেনের গতিও তখন অত্যন্ত ধীর হয়ে পড়েছিল। পরে ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ট্রেনটি দিল্লি এসে পৌঁছায়। ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে আবার নতুন দিল্লি রেলস্টেশন থেকে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করেছে ট্রেনটি।

৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‌বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৮০ কিমি হলেও রেলপথের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে বর্তমানে সেটি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে চলছে।

মোদী সরকারের ‘‌মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় দেশেই এই ট্রেন তৈরির দাবি করা হলেও বাস্তবে সম্পূর্ণ বিদেশি প্রযুক্তি ও প্রায় সবকটি যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে ভারতে তৈরি হয়েছে ‌বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।

২০২২ সালে ‘‌বুলেট ট্রেন’‌ চালু হওয়ার আগে আপাতত শতাব্দী এক্সপ্রেসের কাছ থেকে ভারতের সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেনের শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে দেশের প্রথম ইঞ্জিনবিহীনএই ট্রেনটি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেনটির উদ্বোধন করেছিলেন। বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে হঠাৎ যান্ত্রিক গোলযোগে মাঝপথে আটকা পড়েছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস! এই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-‌র উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে বলে কটাক্ষ করে টুইট করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। যাত্রী সুরক্ষার স্বার্থে মোদীকে পুরো বিষয়টি আরও একবার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তবে, কংগ্রেস সভাপতির এই টুইট-‌আক্রমণের জবাব দিয়ে পাল্টা রাহুলের দিকে তোপ দেগেছেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।

এসব ঘটনার ফলে আমজনতার মনে প্রশ্ন জেগেছে, একদিকে শতাব্দী প্রাচীন ভারতীয় রেলে আজও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব অন্যদিকে, তাড়াহুড়ো করে দ্রুতগামী ট্রেন চালু করার হিড়িক। পেছনে কি শুধুই রাজনীতি?

সাবেক রেলমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘‌‘আধুনিক দেশে ট্রেনের গতি বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু, প্রয়োজন হলেই গতি বাড়ানো যায় না। তারজন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রয়োজন। ভারতের মতো জনবহুল দেশে ‘‌ডেডিকেটেড করিডোর’‌ ছাড়া দ্রুতগতির ট্রেন চালানোর উদ্যোগ কখনওই সফল হতে পারে না। তার শেষতম উদাহরণ হলো, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা বন্দে ভারতের গতি রুখে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের গো-‌মাতারা। সরকারের উচিত পরিকাঠামো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা।’‌‌’

‌তবে বন্দে ভারত ট্রেনটির ভালো-‌মন্দ দুই দিকই আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রেল বিশেষজ্ঞ গুলশন খাতরি জানিয়েছেন, ‘‌‘‌এই ট্রেনের ভালো দিকটি হলো, আজ থেকে ৪০ বছর আগে কোচ আমদানি করেছিল ভারতীয় রেল। মেট্রো রেলের চেয়ে গতিশীল ট্রেন। কোনো স্টেশনে ট্রেন থামার পর খুব অল্প সময়ে পুনরায় দৌড়াতে শুরু করার ক্ষমতা রয়েছে এই ট্রেনে।

অন্যদিকে, যে বিষয়গুলিতে সমালোচনা শুরু হয়েছে তা হলো, মাস দেড়েকের মধ্যে দেশের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাড়াহুড়ো করে এই ট্রেন চালু করা হয়েছে। যেকারণে ট্রেনটিতে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তার জেরেই প্রথম দিনেই বিপত্তি দেখা দিয়েছিল। তাছাড়া দ্রুতগামী ট্রেন চালু করার আগে শতাব্দী প্রাচীন রেললাইনের আধুনিকীকরণ সবার আগে প্রয়োজন, তা করা হয়নি।’‌’

‌মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ‌বন্দে ভারত এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ছয়টায় দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুর দু’টায় বারাণসী পৌঁছানোর পথে কানপুর ও প্রয়াগরাজ স্টেশনে থামবে। আবার দুপুর আড়াইটায় বারাণসী থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ১০টায় দিল্লি পৌঁছবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top