ভারতীয় জেনারেলের হুঙ্কার

সামরিক পথে কাশ্মির সঙ্কট সমাধানের প্রচেষ্টায় কোনো সফলতা না এলেও বলপ্রয়োগের নীতি থেকে সরছে না ভারত। মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে কাশ্মিরবাসীকে। এদিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে এস ঢিলোঁ এক সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিয়েছেন, কাশ্মিরে যেই অস্ত্র হাতে তুলে নেবে তাকে গুলি খেতে হবে। স্বাধীনতা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় বেসামরিকদের বাধাদানের বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তিনি। জেনারেল ঢিলোঁ তার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে মূলত ক’দিন আগে করা সেনাপ্রধানের মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছেন।

তিনিও সেনা অভিযানে বাধা দিলে কঠোর পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তরুণদের ‘সঠিক’ পথে ফেরাতে। কাশ্মিরের সাম্প্রতিক বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামরিক পথে কাশ্মির সঙ্কটের সমাধান আসবে না। তবুও বলপ্রয়োগের নীতির পথেই এগোচ্ছে ভারত।
গত বৃহস্পতিবার পুলওয়ামাতে আরডিএক্স বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’র গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালায়। ওই আত্মঘাতী হামলায় রিজার্ভ পুলিশের ৪৪ সদস্য নিহত হওয়ার পর সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ ও কঠোর সেনা নজরদারি জারি থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা যোদ্ধাদের পেতে রাখা ভয়াবহ বোমায় শনিবার (ইম্প্রোভাইসড এক্সপোসিভ ডিভাইস-আইইডি) নতুন করে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। রোববার রাতে শুরু হওয়া সেনা অভিযানের ধারাবাহিকতায় সোমবার সেনাযোদ্ধা বন্দুকযুদ্ধে দুই পক্ষের ৯ জন প্রাণ হারায়। তা সত্ত্বেও সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলপ্রয়োগের নীতি আরো জোরালো করার আভাস দেয়া হলো।

মঙ্গলবার সেনা কর্মকর্তা কে এস ঢিলোঁ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরে যেই অস্ত্র হাতে তুলে নেবে, তাকেই শেষ করে দেয়া হবে। আমি প্রত্যেক পরিবারকে বলছি, সন্তনদের বন্দুক পরিত্যাগ করে আত্মসমর্পণের পথে আসতে বলুন। এটাই সঠিক পথ। যদি তা না হয়, অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া যে কাউকে গুলি করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, বেসামরিক এলাকায় যখন বন্দুকযুদ্ধ হয়, তখন জনসাধারণকে আমরা নিরাপদে থাকতে বলি। অভিযান পরিচালনার আওতায় থাকা এলাকা ঘেরাও করে রাখি। মানুষকে বলি, তারা যেন বাড়িতেই থাকে এবং এ ব্যাপারে মাথা না ঘামায়। বেসামরিক নিহতের সংখ্যা সীমিত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

ক’দিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত একই কথা বলেছিলেন। হামলার পর তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘আপনারা যদি বাগে না আসেন এবং সেনাবাহিনীর কাজে বাধা সৃষ্টি করেন, তাহলে শুনে নিন আমরা এতদিন যেভাবে শান্তিপূর্ণ পথে অভিযান পরিচালনা করে এসেছি তা কিন্তু আর করব না।’ সেনাপ্রধান আরো বলেছিলেন, ‘কিছু তরুণ হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে বিপথগামী হয়েছে, কিন্তু তারা যদি নিজেদের না পাল্টায় আমরাও কিন্তু শক্ত হাতে তাদের মোকাবেলা করব। সেনাদের কাজে বাধা এলে আমাদের হাতের অস্ত্র ব্যবহারে কিন্তু পিছপা হবো না।’

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়; পুলওয়ামা হামলার মূল হোতা আদিল আহমদ দার পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেট খেলায় ভারতকে সমর্থন করতেন। ক’দিন আগেও তিনি ছিলেন সুফি ধারার অনুসারী। আচমকা সেই মানুষটিই পরিচিত হয়ে উঠলেন স্বাধীনতা যোদ্ধা হিসেবে। গত বছর একইভাবে নিজের চিন্তাধারায় রূপান্তর এনেছিলেন কাশ্মিরি একজন অধ্যাপক। এক সময়ের সমাজবিজ্ঞানের সেই মেধাবী শিক্ষার্থী সামিল হয়েছিলেন সশস্ত্রপন্থী হিজবুল মুজাহিদিনের পতাকাতলে। গত বছর মে মাসে তিনি শহীদ হন।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ব্যাপক মাত্রায় সামরিকায়ন, নিরাপত্তা তল্লাশি নামে নির্বিচার হয়রানি ও স্বশাসনের অধিকার ক্ষুণœ করার মতো বিষয়গুলো স্থানীয়দের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ জাগিয়ে তুলছে। তাদের ঠেলে দিচ্ছে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর দিকে। তা সত্ত্বেও ভারত ক্রমাগত তাদের সামরিক নীতি কঠোর করে যাচ্ছে।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া


Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top