পাকিস্তানকে যেভাবে সহায়তা করলেন ক্রাউন প্রিন্স

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দুদিনের পাকিস্তান সফর শেষ হয়েছে সোমবার। আর এতে ইসলামাবাদের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় আর্থিক ও কূটনৈতিক সমর্থনও পাওয়া গেছে। এটি পাকিস্তানের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল।

সাধারণভাবে এমবিএস নামে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স তিন জাতি (বাকি দুটি দেশ হলো ভারত ও চীন) সফরের বাকি অংশ সম্পন্ন করার জন্য পাকিস্তান ত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।

রোববার প্রাইম মিনিস্টার্স হাউসে স্বাগত বক্তৃতাকালে ইমরান খানের ব্যক্তিগত অনুরোধে এমবিএস ২,১০৭ জন পাকিস্তানি বন্দিকে মুক্তি দিলে সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এমবিএসের সফরের প্রধান খবর ছিল পাকিস্তানে সৌদি আরবের ২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। এর মধ্যে রয়েছে গোয়াদারে ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি তেল শোধনাগার নির্মাণ। দুই দেশের মধ্যে এছাড়াও বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, খনিজ অনুসন্ধান, খেলাধুলা ইত্যাদি খাতে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

পাকিস্তান দায় পরিশোধ নিয়ে মারাত্মক সঙ্কটের সময় সৌদি বিনিয়োগ এলো। এছাড়া জ্বালানি সঙ্কটে জর্জরিত পাকিস্তানের জন্যও এই খাতে বিনিয়োগের সুখবর নিয়ে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা আবদুল রাজাক দাউদ বলেন, সৌদিদের আসায় ও এই দেশে বিনিয়োগ করায় আমরা খুবই খুশি। এখন আমরা চাই, পাকিস্তানি বিনিয়োগকারীরাও একই কাজ করুক। বিশ্ব এখন এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। পাকিস্তান এখন ব্যবসায়ের নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে। এখন আমাদের বিনিয়োগকারী ও দেশের মুনাফার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

দাউদ আরো নিশ্চিত করেন যে শিগগিরই সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও বিপুল বিনিয়োগ আসবে পাকিস্তানে।

ভারতের সাথে উত্তেজনাপ্রবণ অচলাবস্থা

সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের পাকিস্তান সফরের সময়টিতেই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ভারত শাসিত কাশ্মিরে বোমা হামলায় ৪৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায়।

সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কাশ্মিরি হামলার নেপথ্যে থাকা জৈশ-ই-মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। চীন ও সৌদি আরবের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের প্রতি সৌদি আরবের কূটনৈতিক সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে দুই দেশের ইস্যু করা যৌথ বিবৃতিতে। পাকিস্তানি মিডিয়ায় প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের মারাত্মক মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং জম্মু ও কাশ্মির বিরোধ অবসানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রিন্সকে অবহিত করেন।

তবে এশিয়া টাইমস শুনতে পেরেছে যে স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত বিবৃতিতে কাশ্মির শব্দটি থাকলেও মূল বিবৃতিতে তা নেই।

সূত্র জানায়, ক্রাউন প্রিন্স নিশ্চিত করেন যে যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মিরে ভারতীয় পদক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ করা যাবে না, যদিও পাকিস্তানি নেতারা তা চেয়েছিলেন। বিষয়টি বোধগম্য। কারণ এমবিএস দিল্লি যাচ্ছেন ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে। আর ভারত সফরের সময় মোদি সরকার নিশ্চিতভাবেই আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের কড়া নিন্দা জানাতে তাকে চাপ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরকারি বিবৃতিতে কাশ্মির শব্দটি বাদ থাকলেও ইসলামাবাদ মনে করছে, যৌথ বিবৃতিতে অতি প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সমর্থন পাওয়া গেছে। বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘ তালিকা প্রণয়নে রাজনীতি এড়ানোর বক্তব্যটি পাকিস্তানের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল।

সরাসরি পাকিস্তান থেকে ভারত গেলেন না এমবিএস

এমবিএসের সফরে পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবে লাভবান হলেও পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে তার ভারত সফর শেষ করার পর। ভারতও তার বক্তব্য তাদের অনুকূলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সঙ্ঘাতের ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটুক তা এমবিএস চান না। ভারত আপত্তি উত্থাপন করার কারণেই এমবিএস ইসলামাবাদ থেকে রিয়াদ গিয়ে তারপর দিল্লি যান।

এশিয়া টাইমসের এক খবরে বলা হয়, সৌদি আরবে সামরিক সম্পৃক্ততার বিনিময়ে পাকিস্তানের প্রতি আর্থিক ও কূটনৈতিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরব।

সোমবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সাথে এমবিএসের বৈঠকে সামরিক বিষয়াদি নিশ্চিত হয়।

সামরিক সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা অনুযায়ী, দেশটিতে সৈন্য বাড়াবে পাকিস্তান।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top