পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় ৩৫ ও ৩৬ নং পিলারের উপর আরো একটি স্প্যান স্থাপনের মধ্যদিয়ে দুই প্রান্তে দৃশ্যমান হলো ১২০০ মিটার। আর ৮ম স্প্যানটি বসানোর পর স্বপ্নের পদ্মা সেতু আরো এক ধাপ এগুলো বাস্তবতার দিকে।
জাজিরা প্রান্তে ৬ষ্ঠ স্প্যান বসানোর মাত্র ২৮ দিন পর আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে শক্তিশালী ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই এর মাধ্যমে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের এই সপ্তম স্প্যানটি বসলো।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে জাজিরা প্রান্তে বসানোর জন্য ৭ম স্প্যানটি নাওডোবোর উদ্দেশে রওয়ানা হয়। স্প্যানটি বিকেলে জাজিরার নাওডোবার ৩৫ ও ৩৬ নাম্বার পিলারের কাছ রাখা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর প্রস্তুতি শেষে আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১টার সময় ক্রেন দিয়ে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের ওপরে স্প্যানটি স্থাপন করা হয়।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নাম্বার পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান, ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নাম্বার পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান, ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নাম্বার পিলারের ওপর তৃতীয় স্প্যান, ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নাম্বার পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান ২৯ জুন ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পঞ্চম স্প্যান ও এবং সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারী ২০১৯ ৩৬ ও ৩৭ বসানো হয় ৬ষ্ঠ স্প্যানটি। আজ জাজিরার নাওডোবায় ৭ম স্প্যানটি বসানোর মধ্যদিয়ে জাজিরা প্রান্তে ১০৫০ মিটার মুন্সীগঞ্জ প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের উপর বসানো ১টি স্প্যানসহ এখন দৃশ্যমান হলো ১২০০ মিটার।
পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটির উপর এরূপ ৪১টি স্প্যানের সাহায্যে পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াবে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের উন্নয়নের রূপকার। পদ্মা সেতুর কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৩ শতাংশ।
এছাড়া প্রকল্পের বনায়ন, সংযোগ সড়ক, আশ্রয়নসহ নানা কাজের ৭৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি সেতু বিভাগের। ৮ম স্প্যানটি বসানোর সংবাদে পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। এ সেতু শুধু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলই নয় সাড়া দেশের সড়ক বিভাগকে এক সুতোয় গেঁথে দেবে। আর দেশের অর্থনীতিতে উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্তের। পদ্মাসেতুর দু’পাড়ে গড়ে উঠবে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র, শিল্পায়নসহ আধুনিক শহর। শ্রমজীবি মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা বানিজ্যের।
জাজিরা পূর্বনাওডোবা এলাকার আব্দুল লতিফ ফকির বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে আমাদের বাপ-দাদার ভিটে মাটি দিয়েছি। ভেবে ছিলাম সেতু করার নামে আমাদের জমিজমা নিয়ে গেল। আমাদের প্রান্তে পরপর ৭টি স্পেন বসানো হয়ে গেলো। এ সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। এটা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। আমারা বাপ-দাদার ভিটে মাটি হারিয়েও এখন আনন্দিত। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
মো: মোসলেম মাদবর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশী-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করেন। কোনো ষড়যন্ত্রই সেতু নির্মাণ কাজের গতি থামাতে পারেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই জাজিরাকে বিশ্ববাসী চিনেছে। এ কারণে আমরা গর্বিত। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সেতু বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: হুমায়ুন কবীর বলেন, বুধবার দুপুরে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৭ম স্প্যানটি বসানো হলো। আগামী মাসের মধ্যে আরো স্প্যান বসানো হবে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে সেতুর প্রায় ৬৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি বসানোর পর প্রায় ৭৩ ভাগ কাজ শেষ হলো। চলতি বছরের মধ্যে সবক’টি স্প্যান বসিয়ে সেতুটি দৃশ্যমান করে তুলবো।