অসুস্থতার জন্য খালেদা জিয়াকে আদালতে আনা হয়নি

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থতার কারণে নাইকো মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করা হয়নি।

আজ বুধবার পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার নবম বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে এ মামলার শুনানি হয়। খালেদা জিয়া এ কারাগারেই বন্দি আছেন।

আজ এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ব্যাপারে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। পরে আদালত আগামী ৩ মার্চ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন।

এছাড়া গত ১২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত যে আবেদন করা হয়েছিল এ বিষয়ে আজ পরে আদেশ দেবেন বলে জানান বিচারক।

আগামী ধার্য তারিখে এ মামলায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদনের উপরও শুনানি হতে পারে।

আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রেজাক খান ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।

নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ মোট আসামি ১১ জন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো: শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

১২ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে যা হয়েছিল- 
গত ১২ ফেব্রুয়ারি খুবই অসুস্থ কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে হুইল চেয়ারে করে হাজির করার পর আইনজীবীদের বলেন, তিনি অসুস্থবোধ করছেন। তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে আইনজীবীদের পরামর্শ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো মামলা শুনানিতে বিশেষ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে আনার পর খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও কায়সার কামাল। এসময় খালেদা জিয়া তার অসুস্থতার কথা তাদের জানান।

এ বিষয়ে মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তাদের জানিয়েছেন তিনি খুবই অসুস্থ। তার যেসব সমস্যা রয়েছে তা বেড়ে গেছে। এজন্য ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানোর আবেদন করতে তিনি তাদের পরামর্শ দেন।

এরপর আদালতে নাইকো মামলার শুনানির এক পর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি আদালতে বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে তাকে আবার কারাগারে আনা হয়। বর্তমানে উনার শারীরিক অবস্থা ভালো না। উনার শারীরিক সমস্যাগুলো বাড়ছে। তার চিকিৎসার ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে। এখন তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ তাই আমরা ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা আবারো তাকে চিকিৎসা দেয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করছি। দয়া করে আদেশ দেন যাতে আমরা তার চিকিৎসা করাতে পারি।

এ সময় আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশটি আছে কি-না?

জবাবে খালেদার আইনজীবী বলেন, আদেশটি আছে। আমরা তা দাখিল করে দেব।

এ সময় দুদকের আইনজীবীর কাছে তার বক্তব্য জানতে চান আদালত। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে জেল কোড অনুযায়ী আপনি আদেশ দিতে পারেন।

এরপর আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশটি আদালতে দাখিল করেন। আমি দেখে পরে আদেশ দেবো।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি জানিয়ে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি চিঠি দেয়া হয়েছে। গতকাল আদালতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

১২ ফেব্রুয়ারি এ আদালতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আসামী পক্ষের আবেদনের ওপর পঞ্চম দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন আদালতে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে নিজেই শুনানি করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তার শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন।

এ সময় আদালতে আরো উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, জয়নুল আবেদীন মেজবা, জাকির হোসেন ভূইয়া প্রমুখ।

ওই দিন দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়ার পা থেকে কোমড় পর্যন্ত সাদা কাপড়ে আবৃত ছিল। বেগুনী রংয়ের শাড়ি পরা ছিলেন। তার মুখ কিছুটা কাঁপছিল। খালেদা জিয়াকে আদালতে আনার পর বেলা ১২টা ২৮ মিনিটে নাইকো মামলার শুনানি শুরু হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষ হয় ২টা ১০ মিনিটে। আদালতে প্রয় পৌনে দুই ঘণ্টা খালেদা জিয়া হুইল চেয়ারে বসেছিলেন। ওই সময় তার সঙ্গে গৃহকর্মী ফাতেমাও ছিলেন। দীর্ঘ সময় আদালতে বসে থাকলেও খালেদা জিয়া কোনো কথা বলেননি। শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুনানিতে মওদুদ আহমদ আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদা চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মামলার উচ্চ আদালতের রায় উল্লেখ করে বলেন, এই রায়ের আলোকে আাপনি এক্সামিন করে দেখুন। আমার সাবমিট যদি সঠিক হয়, তাহলে এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ করুন। এই মামলার প্রোসেডিং এখানেই শেষ করুন। এই মামলার কার্যক্রম এখানেই শেষ হওয়া উচিত। এরপরে এ মামলা কার্যক্রম চলে না। তারপরও যদি আপনি (বিচারক) চান, তাহলে এই মামলার শুনানি করতে পারি।

এরপর আদালত শুনানি চালিয়ে যেতে বললে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার শুনানি শেষ করেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top