পাকিস্তান ভারত দ্বন্দ্ব : কী চায় কাশ্মিরিরা

পাকিস্তান ভারতের দ্বন্দ্ব শুরু হলেই এর প্রতিক্রিয়ায় ভুগতে থাকে কাশ্মির বিশেষ করে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের লোকজন। কিন্তু তারা আসলে কী চায়?

বিশ্বে যেসব সংঘাতপূর্ণ এলাকা সবচেয়ে বেশি আলোচিত সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে কাশ্মির। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ পাকিস্তান ও ভারত উভয়েই এ কাশ্মিরের পুরোটা নিজেদের অধীনে রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। উভয় দেশই এর একটি করে অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

দুই দেশের মধ্যে সামরিক গোলযোগ শুরু হলেই, তা যত ছোট বা বড় হোক না কেন, তার চাপ এসে পড়ে কাশ্মিরের ওপর। ভারতভাগের পর থেকেই ভারতের সেনাবাহিনী তাদের অধিকৃত কাশ্মিরে প্রচ- চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীসহ ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের সাথে তাদের সংঘাতের সৃষ্টি হয়। আর যে কোনো অজুহাতে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে প্রতি বছরই শত শত কাশ্মিরি নিহত হয়।

সম্প্রতি পুলাওয়ামা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ অঞ্চলে আবারো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পুলাওয়ামা জেলায় গত সপ্তাহে হওয়া হামলাটি ছিল কয়েক দশকের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীর ওপর হওয়া সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আক্রমণ, যেখানে কয়েক দফা বোমা বিস্ফোরণে এবং গোলাগুলিতে ৪৪ জন নিহত হয়।

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘাতের কারণে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষও মারা গিয়েছে গত বছর: ২০১৮ সালে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বেসামরিক ব্যক্তি এবং জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যসহ কাশ্মিরে ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।

বিতর্কের কেন্দ্রে কাশ্মির
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই কাশ্মির বিতর্কের কেন্দ্রে।
কাশ্মিরের অংশবিশেষ ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে। পুলাওয়ামাতে গত সপ্তাহের সহিংস সংঘাতের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারো যুদ্ধংদেহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদকে দায়ী করেছে ভারত, যার ধারাবাহিকতায় ভারতের বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভের পাশাপাশি কাশ্মিরি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, গায়কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিরা হামলার শিকার হয়েছেন। কাশ্মিরে গত সপ্তাহের শেষদিকে মোবাইল ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।

পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলেই তা ভিন্ন মাত্রা নেয়। এই দুই দেশের দ্বন্দ্বের মূল রেশটা গিয়ে পড়ে কাশ্মিরে বসবাসকারী মানুষের ওপর।

কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দু’বার আলাদা যুদ্ধ ছাড়াও (১৯৪৭ ও ১৯৬৫ সালে) দুই দেশের সেনাবাহিনী, জঙ্গী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে বর্তমানে কাশ্মিরের অর্থনীতির অবস্থা নাজুক, কর্মসংস্থান সঙ্কট প্রবল এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চরমে।

কাশ্মিরের মানুষ কী চায়?
১৯৫০’এর দশক থেকেব জাতিসংঘ বলে আসছে যে কাশ্মির ইস্যুতে ঐ এলাকার মানুষের মতকে প্রাধান্য দেয়ার লক্ষ্যে একটি গণভোট আয়োজন করা উচিত।

ভারত এই পরিকল্পনাকে শুরুতে সমর্থন করলেও পরবর্তীতে তারা জানায়, গণভোট আয়োজন প্রয়োজনহীন; কারণ ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরে নির্বাচনে সেখানকার মানুষ ভারতের সাথে থাকার পক্ষেই মত দেবে। কিন্তু পাকিস্তান এই দাবি সমর্থন করে না। ইসলামাবাদের বক্তব্য, ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের অনেক মানুষই ভারতের সাথে থাকতে চায় না; তারা হয় স্বাধীনতা চায়, নয়তো পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয়ার পক্ষপাতী।

ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের জনসংখ্যার ৬০ ভাগের বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এটিই ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগুরু।

সূত্র : বিবিসি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top