পুলওয়ামা ঘটনায় ভারতজুড়ে পাকিস্তান ও কাশ্মিরের বিরুদ্ধে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির পশ্চিমবঙ্গের চেহারা তার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। এ হামলার জন্য বিজেপিকে দোষারোপ করেছেন মমতা। বরং পশ্চিমবঙ্গে যেন কোনো গুজবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই আহ্বানই জানিয়েছিলেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাজ্য পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে কলকাতা পুলিশের নতুন কমিশনার অনুজ শর্মা জানান, ‘কাশ্মিরিরা এই শহরে পুরোপুরি নিরাপদ’।
গত সপ্তাহে পুলওয়ামায় সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলার পর পুরো দেশ থেকেই কাশ্মিরিদের ওপর বিভিন্ন ধরনের আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও পাকিস্তানিদের ৪৮ ঘণ্টার ভেতর স্থান পরিত্যাগেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি প্রমাণ করলেন, তিনি আসলেই ভিন্নরকম। কলকাতা পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মির উপত্যকার মানুষরা এ শহরে একদমই নিরাপদ। তাদের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মঙ্গলবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, ‘কাশ্মিরিরা এই শহরে পুরোপুরি নিরাপদ। আমি একটু আগেই অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছি। যে যে স্থানে কাশ্মিরিরা থাকেন, চিহ্নিত করেছি সেই স্থানগুলোকেও। তাদের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তারা এই শহরে সম্পূর্ণ নিরাপদ। এমনটাই আমি বিশ্বাস করি।’
গত শুক্রবার ২২ বছর ধরে কলকাতার বাসিন্দা এক কাশ্মিরি চিকিৎসককে কয়েকজন মিলে ঘিরে ধরে হুমকি দেয় এবং এ শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলে। ওই চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতেই দায়ের করা হয় একটি এফআইআর।
এছাড়া, শহর ও জেলার বেশ কয়েকটি স্থান থেকে ‘ছেলেধরা’-র গুজবও তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই সব স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছেলেধরারা, যারা, বাচ্চাদের অপহরণ করে তাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুলে নিচ্ছে। অনুজ শর্মা জানান, এ ধরনের গুজবের বিরুদ্ধে গণসচেতনতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে কোনোভাবেই এ ‘পরিকল্পিত প্রচেষ্টা’র কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয়।
গত বৃহস্পতিবার কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের গাড়িবহরের ওপর এক আত্মঘাতী হামলায় ওই বাহিনীর ৪৪ জন নিহত হয়। পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। পরের দিন ওই ঘটনাস্থল থেকে চার কিলোমিটার দূরে এক হামলায় এক সেনা সদস্য নিহত হন। রোববার রাতে পুলওয়ামার কাছেই আরেকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে জয়েশ-ই মোহাম্মদের দুই সদস্যকে হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় অভিযানকারী দলের একজন মেজরসহ চার সদস্য নিহত হয়।
এদিকে এ ঘটনায় পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলছে। মঙ্গলবার এ নিয়ে মুখ খুলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও। তিনি বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে পাকিস্তানে হামলা চালানোর কথা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আক্রান্ত হলেও পাকিস্তানও বসে থাকবে না।