প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মীয়মান রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে আগামী তিন বছরের মধ্যেই উৎপাদন শুরু হবে বলে সরকার আশা করছে।
সম্প্রতি দিল্লি সফরের সময় বিবিসি বাংলার কাছে তিনি দাবি করেছেন যে, রামপালে পরিবেশগত আশঙ্কার দিকটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কারণে রামপাল প্রকল্প পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং নিকটবর্তী সুন্দরবনে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে – এই যুক্তি দিয়ে বাংলাদেশে পরিবেশবাদী বহু সংগঠনই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করছে।
তবে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আবারো নাকচ করে বলেন, ‘আমরা মনে করছি আর বছর তিনেকের ভেতরেই রামপাল প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে দেয়া যাবে।’
‘মানে ওই সময়সীমার মধ্যে রামপালের বিদ্যুৎ গ্রিডে চলে আসবে।’
‘এই মুহূর্তে প্রকল্পটি যদিও নির্ধারিত সময়সীমার চেয়ে একটু পিছিয়ে (‘বিহাইন্ড শিডিউল’) আছে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো, এই প্রকল্পে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি কিন্তু এখন পুরোপুরি সেটলড!’ – বলছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রামপালে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছি এবং যেসব দূষণবিরোধী পদক্ষেপ বা মিটিগেটিং মেজারস নিচ্ছি তাতে সুন্দরবনের বা পরিবেশের কোনো বড় ঝুঁকি আর নেই।’
তিনি আরো জানান, রামপালে অনেক খরচ করে বাংলাদেশ এখানে যে ‘আলট্রা-সুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি’র প্রয়োগ করছে, তাতে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকো পর্যন্ত সন্তুষ্ট।
ভারতের এনটিপিসি (ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন) এবং ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল) নামে দুটি সংস্থা রামপাল প্রকল্পর বাস্তবায়নের কাজে যুক্ত আছে।
দিল্লি সফরে এই সব সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর আলোচনা হয়েছে। আলোচনার সময় তিনি রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে আর কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হবে না বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।
রামপাল নিয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তির একটা বড় কারণ ছিল ওই প্রকল্পে কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে – যা প্রবল দূষণ সৃষ্টিকারী জ্বালানি হিসেবে পরিচিত।
মি. চৌধুরী অবশ্য দাবি করছেন, তারা এখন যে ধরনের প্রযুক্তি রামপালে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে কয়লা সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না।
তিনি বলেন, ‘কয়লা নিয়ে আশঙ্কার প্রধান কারণটা হলো বাতাসে তারা সালফার অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড – যাদের সংক্ষেপে ‘সক্স নক্স’ বলা হয়ে থাকে – তার নির্গমন ঘটায়।
‘এগুলো থেকে আবার অ্যাসিড রেইন-ও হয়,’ অ্যাসিড বৃষ্টি সম্পর্কে বলছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
‘কিন্তু আমরা রামপালে আলট্রা সুপার-ক্রিটিকাল বা বিশেষ ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর ফলে এই সালফার বা নাইট্রাস পার্টিকলগুলোকে ট্র্যাপ করে ফেলা সম্ভব – অর্থাৎ বাতাসে সেগুলো বেরোতেই পারবে না।’
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এতে আমাদের অনেক বাড়তি খরচ হচ্ছে ঠিকই, প্রকল্পের ব্যয়ও হয়তো কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে।’
‘‘কিন্তু এই সব আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রামপালে বলা যেতে পারে একেবারে ‘ক্লিন কোল’ টেকনোলজি বা প্রায় সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত কয়লার ব্যবহার হচ্ছে।’’
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের এনটিপিসি-র মধ্যে প্রথম সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১০ সালের আগস্টে।
তখন ধরা হয়েছিল ২০১৬ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পটি ‘কমিশনড’ হবে, অর্থাৎ সেখানে উৎপাদন শুরু করা যাবে।
কিন্তু নানা কারণে সেই সময়সীমা রক্ষা করা যায়নি। তবে এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাশা, সব বাধা মিটিয়ে ২০২১ সালের শেষ দিকেই রামপাল থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসতে শুরু করবে।