ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজছে রিয়াদ

সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা কমিয়ে আনতে চায়। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিল্লি সফরের আগ মুহূর্তে দেশটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ সম্প্রতি এশিয়া সফরে বের হয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি পাকিস্তান সফর করেছেন। মঙ্গলবার তিনি দিল্লি সফরে যাচ্ছেন।

তার সফর শুরুর প্রাক্কালে গত বৃহস্পতিবার ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী হামলায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের ৪৪ জন সদস্য নিহত হয়। এর পরপরই এ হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

এক পর্যায়ে পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়। কিন্তু চীনের হস্তক্ষেপে ভারতের এ প্রচেষ্টা বানচাল হয়ে যায়। এরপর ভারত বাণিজ্যক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিশেষ সুবিধা বাতিল করে উল্টো পাকিস্তানী পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।

পাকিস্তান দিল্লির এ অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো নিজেদের দিকে নজর দিতে বলে। এছাড়া উভয় দেশ নিজেদের হাইকমিশনারদের নিজ দেশে ডেকে নেয়। সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মিরকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু উভয় পক্ষই এ অঞ্চলের একটি করে অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। পাকিস্তানের অংশ পরিচিত আজাদ কাশ্মির নামে, আর ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশ পরিচিত জম্মু-কাশ্মির নামে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের গত সোমবার বলেন, রিয়াদ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চালাবে। পাশাপাশি তাদের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পথ খুঁজবে।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের গত সোমবার বলেন, রিয়াদ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চালাবে। পাশাপাশি তাদের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পথ খুঁজবে।

পাকিস্তানে দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ

পাকিস্তানের সাথে দুই হাজার কোটি ডলারের কয়েকটি বিনিয়োগ চুক্তিতে সই করেছে সৌদি আরব। গত রোববার এ চুক্তি সই হয়। এশিয়ায় কূটনৈতিক সফরের প্রথমেই ইসলামাবাদ গিয়ে মোহাম্মদ সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এ চুক্তির ফলে মন্দা অর্থনৈতিক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছে পাকিস্তান।

সৌদি যুবরাজের দুই দিনের সফরে প্রত্যাশা করা হয়েছিল এ সফরে তিনি এক হাজার কোটি ডলারের বিভিন্ন চুক্তিতে সই করবেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইরানের সীমান্তে একটি তেল সংশোধনাগার স্থাপন। কিন্তু পাকিস্তানের সেই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে সৌদি যুবরাজ শেষ পর্যন্ত দ্বিগুণ অংকের চুক্তিতে সই করেন। ফলে অর্থনীতিতে নাজুক অবস্থায় থাকা পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য এটি বেশ ইতিবাচক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দুই হাজার পাকিস্তানির মুক্তি
সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি দুই হাজার পাকিস্তানিকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। যুবরাজকে স্বাগত জানিয়ে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ইমরান খান। সেখানে এক বিশেষ অনুরোধে ইমরান খান যুবরাজকে বলেন, তিনি যে সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানী শ্রমিকদের প্রতি বিশেষ নজর রাখেন। তাদের যেন তিনি ‘নিজের দেশের লোকজনের’ মতো দেখেন।

ইমরান খান বলেন, সৌদি আরবে তিন হাজারের মতো পাকিস্তানি বন্দি রয়েছেন। তারা খুবই দরিদ্র। দেশে পরিবার-পরিজনকে ফেলে রেখে তারা কাজের খোঁজে সেখানে গিয়েছেন। যুবরাজ যেন তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেন।
এসময় যুবরাজ বলেন, সৌদি আরবে আমাকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিবেচনা করবেন।

এদিকে, রোববারই এক টুইটে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফায়াদ চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে যৌদি যুবরাজ সেদেশের জেলে বন্দি ২১০৭ জন পাকিস্তানীকে দ্রুত মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top