ব্যাটসম্যান-বোলারদের অনুজ্জল পারফরমেন্সে নিউজিল্যান্ডের কাছে ইতোমধ্যে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে সফরকারী বাংলাদেশ। সিরিজ হেরে এখন হোয়াইটওয়াশের মুখে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে হারলেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পাবে বাংলাদেশ। তবে সিরিজ হারের স্মৃতি ভুলে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোই এখন প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের। ডানেডিনে ইউনিভার্সিটি ওভালে মঙ্গলবার ভোর রাত চারটায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
সিরিজে ভালো খেলার লক্ষ্য নিয়েই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে পারফরমেন্সের উজ্জলতা ছড়াতে পারেনি মাশরাফি দল। বিশেভাবে টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম ম্যাচে ৯৪ রানের মধ্যে ছয় ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে নিজের জায়গা দখল করেন।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশের স্কোরলাইনে। ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। আর দু’বারই বাংলাদেশকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন। প্রথম ম্যাচে ৯০ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তাকে ঐ ম্যাচে সঙ্গ দিয়েছিলেন নয় নম্বরে নামা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। খেলেছিলেন ৪১ রানের ইনিংস। ফলে ২৩২ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এই সংগ্রহ দিয়ে লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ওপেনার মার্টিন গাপটিলের অপরাজিত ১১৭ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন মিথুন। এবার তার পাশে থেকে দলকে সম্মানজনক স্কোরে নিয়ে যান সাব্বির রহমান। সাত নম্বরে নামা সাব্বির করেন ৪৩ রান। শেষ পর্যন্ত ২২৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। দু’বারই অলআউট হয় টাইগাররা। এবারও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেন নিউজিল্যান্ডের গাপটিল। তার ১১৮ রানে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
মিথুনের দু’টি হাফ-সেঞ্চুরি, সাইফউদ্দিনের ৪১ ও সাব্বিরের ৪৩ রানের পাশে দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা পুরোপুরি ব্যর্থ। দুই ম্যাচে তামিম ইকবালের রান ১০, লিটন দাসের ২, সৌম্য সরকারের ৫২, মুশফিকুর রহিমের ২৯, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ২০ রান। টপ-অর্ডারের শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যর্থ হন, তখন তো বড় সংগ্রহ গড়ে তোলাই মুশকিল।
তাই ২৩২ ও ২২৬ রানের পুঁিজতে যে লড়াই করা যায় না তা স্পস্ট করেই বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে দলের কাছ থেকে কেমন স্কোর চান তা বুঝিয়ে দেন ম্যাশ। তিনি বলেন, ‘আমরা দল হিসেবে খেলছি। তারপরও আমরা ২২০-২৩০ রান করছি। কিন্তু ২৭০-২৮০ রান করতে পারলে আমরা লড়াই করতে পারতাম।’
২৭০-২৮০ রানের পুঁজি পেতে হলে বড় বড় জুটির প্রত্যাশায় মাশরাফি। শুরুতে উইকেট হারানোতে দল বেকাদায় পড়ছে বলে মনে করেন ম্যাশ। তিনি বলেন, ‘আমরা শুরুতে দ্রুত উইকেট হারিয়েছি। আমাদের জুটিগুলো ছিলো ৩০ রানের, ৬০ রানে হতে পারতো এবং এতে ম্যাচ অন্যরকম হতে পারতো। আমাদের শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলতে পারেনি। মিথুন ভালো স্কোর করেছে।’
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে তিন সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। ২০০৭, ২০১০ ও ২০১৬ সালের সফরে। সবগুলো সিরিজই তিন ম্যাচের ছিলো। এবার হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পেতে পারে কি-না, সেটির জন্য অপেক্ষায় টাইগার ভক্তরা। তবে তৃতীয় ওয়ানডেতে জয় পেলে, বাংলাদেশের দু’টি আশা পূরণ হবেই। একটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়। আর দ্বিতীয়টি হলো, প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ না হওয়া।
তবে কাজটি বেশ কঠিনই বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু আবারো বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে বদ্ধ পরিকর নিউজিল্যান্ড। এ কাজটি নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে ছাড়াই করতে হবে কিউইদের। কারণ তৃতীয় ওয়ানডেতে বিশ্রামে থাকবেন উইলিয়ামসন। তার পরিবর্তে দলের নেতৃত্ব দিবেন ব্যাটসম্যান টম লাথাম।
বাংলাদেশের দল : মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিথুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান ও সাব্বির রহমান।
নিউজিল্যান্ড দল : টম লাথাম (অধিনায়ক), টড অ্যাস্টল, ট্রেন্ট বোল্ট, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, লুকি ফার্গুসন, মার্টিন গাপটিল, ম্যাট হেনরি, কলিন মানরো, জেমস নিশাম, হেনরি নিকোলস, রস টেলর, মিচেল স্যান্টনার ও টিম সাউদি।