ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন : কী করবে ছাত্রদল?

দীর্ঘ ২৮ বছর অকার্যকর থাকার পর ফের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের। গত ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আজ থেকে শুরু হচ্ছে মনোনয়নপত্র বিতরণ। এ দিকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হতে চললেও এখনো নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশির ভাগ। একমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও তাদের শরিক জোট সন্তুষ্ট থাকলেও এ বিষয়ে উত্থাপিত দাবিতে আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করছে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মসূচিতে ব্যস্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্যানেল ঘোষণা করেছে জাসদ ছাত্রলীগ। অন্য দিকে হলের বাইরে ভোট কেন্দ্রসহ ৬ দফা দাবিতে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।

ডাকসু নির্র্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ শুরু হচ্ছে আজ থেকে। আজ থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হল প্রাধ্যক্ষ অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হলে ওই মনোনয়ন জমা নেয়া হবে। বেলা ২টা থেকে নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সেমিনার কক্ষে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায়। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে প্রার্থিতা বিষয়ে আপত্তি গ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২ মার্চ এবং ৩ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

তবে আজ থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণের কাজ শুরু হতে চললেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছে ছাত্রদল। এবার ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনার শুরুতে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত, ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখাসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্রদল। এ ছাড়া প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাতিলের দাবিও জানিয়েছে তারা। অন্য বিরোধী সংগঠনগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিজেদের প্রস্তাবিত দাবি না মানলে মনোনয়নপত্র নেবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ‘আগামীকাল থেকে যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে, সেটাতে আমরা অংশগ্রহণ করবো না। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা মনোনয়নপত্র নেবো না। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত প্রশাসনের সাথে তারা আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এ সময় ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রদলের এমন দাবির বিপরীতে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান গতকাল বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধির বিষয়ে সিন্ডিকেটের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের দাবি-দাওয়া এখন সিন্ডিকেটের বিষয়।

এ দিকে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে স্থাপনসহ ৬ দফা দাবিতে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। দুপুর ১২টা থেকে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি মিছিল নিয়ে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় ৬ দফা দাবি জানান তারা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যেÑ ক্যাম্পাস ও হলগুলোকে সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত করে সংগঠনগুলোর সহাবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত : গেস্টরুম-গণরুমে নির্যাতন বন্ধ করা ও সব নির্যাতনের বিচার; প্রয়োজন ও মেধার ভিত্তিতে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে প্রথম বর্ষ থেকে হলে বৈধ সিটের ব্যবস্থা; ডাকসু ও হল সংসদ ফি প্রদানকারী শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার নিশ্চিত; হলে অবস্থানরত ও সংযুক্ত সব শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার সুরক্ষায় ভোটকেন্দ্রে একাডেমিক ভবনগুলো স্থাপন এবং শ্রেণিকক্ষে প্রচারণা, নির্বাচনী সমাবেশে জাতীয় নেতাদের অংশগ্রহণের বাধাসহ আচরণবিধির অগণতান্ত্রিক বিধানগুলো বাতিল করতে হবে।

এ সময় সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন আধিপত্য ও দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে। এ অবস্থায় হলে ভোটকেন্দ্র হলে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। নির্বাচনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে বেশির ভাগ ছাত্র সংগঠন হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা উপেক্ষা করেছে। ছাত্রলীগকে বিশেষ সুবিধা দিতেই প্রশাসন অগণতান্ত্রিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবিলম্বে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা।
স্বতন্ত্র জোটের আত্মপ্রকাশ : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘স্বতন্ত্র জোট’র আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গতকাল বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অরণি সেমন্তি খান।

অরণি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘স্বতন্ত্র জোট’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়ে নির্বাচন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমরা শুনেছি, হল ও বিভাগগুলোতে নির্দলীয় সাধারণ ছাত্র বিভিন্ন পদে ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই খবর তারা গোপন রাখার চেষ্টা করছে। যৌক্তিক কারণেই তারা ভয় পাচ্ছে একবার ছাত্রলীগের কানে এই খবর গেলে তাদেরকে ভয়াবহ নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হবে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্যানেল ঘোষণা জাসদ ছাত্রলীগের : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে জাসদ ছাত্রলীগ (আম্বিয়া)। গতকাল দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে প্যানেল ঘোষণা করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জাসদ ছাত্রলীগের (আম্বিয়া) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু। জাসদ ছাত্রলীগ খসড়া তালিকায় প্রার্থী করেছে ২৫ জনকে। এদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান রাহাতকে ভিপি, শাহরিয়ার রহমান বিজয়কে জিএস, নাঈম হাসানকে এজিএস পদের জন্য মনোনীত করেন তারা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণামূলক কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ : ডাকসু নির্বাচনকে সামেন রেখে প্রচারণামূলক কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রলীগ। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আধুনিক, যুগোপযোগী, মানসম্মত, ডিজিটাল কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি কমপ্লেক্সের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্রলীগ। এতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে রেজাওয়ানুল হক বলেন, মেধার বিকাশের জন্য পড়াশোনার যে পরিবেশ দরকার তা আমরা প্রথম বর্ষ থেকে পাচ্ছি না। আমাদের পড়ার জন্য সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে লাইব্রেরিতে পড়ার জন্য লাইন ধরতে হয়। তাই প্রশাসনের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, হলের রিডিং রুমের সিট বৃদ্ধি করার আহ্বান করছি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top