‘পোলিং এজেন্ট নিয়ে ৯৮ ভাগ অভিযোগের সত্যতা থাকে না। ভোটের দিন অনেক এজেন্ট প্রার্থীর অবস্থা ভালো না দেখলে কেন্দ্র ছেড়ে যান। অনেক দুর্বল প্রার্থী আবার এজেন্টই দিতে পারেন না। এমন বাস্তবতায় ভোট শেষে অনেকে তাদের এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন, যা অনেকাংশেই সত্য নয়। ফলে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সব পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে অবস্থান, তাদের নিরাপত্তা বিধান ও ভোট শেষে এজেন্টদের হাতে ফলাফলের একটি করে শিট ধরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।’
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের মতো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অব্যাহত থাকবে।
নুরুল হুদা বলেন, ‘প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনী মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং তা ইসির নিয়ন্ত্রণকক্ষে জানাবেন। প্রয়োজন হলে কমিশন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। আপনাদের নিশ্চিত থাকতে হবে, নির্বাচন অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক হবে। কাউন্সিলর পদে অনেক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সুতরাং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে’।
সিইসি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রেকর্ডে রাখার মতো সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে হয়েছে। এটা আমি দাবি করতে পারি প্রকাশ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতা ছিল বলেই একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব হয়েছে।’
সভায় সিইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, ‘২০১৪ সালের পরিস্থিতি থেকে ২০১৮ সালে এই রকম বিরল সুষ্ঠু নির্বাচন উত্তরণে আপনারাই ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতা ছিল বলেই একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব হয়েছে। একেবারে ধ্বংসপ্রায় অবস্থা থেকে, একটা বিশৃঙ্খলা অবস্থা থেকে একটা সুষ্ঠু অবস্থায় আপনারা নিয়ে এসেছেন। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাদের আবারও ধন্যবাদ। সেই রকমই পরিবেশ অব্যাহত থাকবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে এবং তার বাইরে উপজেলা নির্বাচনে।’
সিইসি বলেন, ‘কদিন আগেই আমরা বড় একটা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের সবার মধ্যে ফ্রেশ রয়েছে, তাজা রয়েছে। এমন অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা যাকে বলে, তা ঘটেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যেমন সহিংসতা ঘটেছিল, তা একাদশ নির্বাচনে ঘটেনি। যদিও কয়েকটি ঘটনায় পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এসব প্রাণহানির ঘটনায় ইসি মর্মাহত হয়েছে। কিন্তু এগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক হয়েছে, তা বলব না। বেশিরভাগই ঘটেছে ভোটকেন্দ্রের বাইরে। এগুলো ঘটেছে কারো বাড়িতে, মাঠে কিংবা দূরে। তার পরও আমরা সবার আত্মর মাগফিরাত কামনা করি। তবুও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্র রেকর্ডে রাখার মতো সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে হয়েছে। এটা আমি দাবি করতে পারি প্রকাশ্যে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা সিটির নির্বাচন মানে হচ্ছে, দেশের রাজধানী শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনের বিষয়ে কোনোরকম কোনো বিচ্যুতি হবে না। এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করব, কোথায় কী করতে হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন যাতে অবাধ হয়, সেটা দেখতে হবে এবং নির্বাচন যাতে গ্রহণযোগ্য হয়, সেটার দিকে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নির্বাচনে কার কী দায়িত্ব, তা সবাই জানেন। আপনারা আপনাদের প্রজ্ঞা দিয়ে, দক্ষতা দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করবেন।’
‘নির্বাচনে জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবেন, যাঁকে ভোট দেবেন, তিনি নির্বাচিত হবেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে প্রতিযোগিতা বেশি হয়। বিশেষত, কাউন্সিলর পদে বেশি প্রার্থী থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। এসব প্রার্থীর পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তার কোনো দলীয় পরিচয় দেখার প্রয়োজন নেই। তিনি কেবল একজন প্রার্থী হিসেবেই বিবেচিত হবেন।’
ভোটাররা যাতে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে বলেও তাগিদ দেন সিইসি। তিনি বলেন, এর মানে হচ্ছে, নির্বাচনের আগে থেকে নির্বাচনের দিন ও পরের দিন পর্যন্ত ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
ভোটের দিন পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা বিধানে সবাইকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিইসি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে না পারে, সে জন্য নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে থাকতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মাঠে তিন ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট ছিল, তাদের প্রতিদিনের প্রতিবেদন ইসি সচিব পর্যালোচনা করতেন, আমাদের জানাতেন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিতাম।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং নতুন যুক্ত হওয়া দুই সিটির ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার সকাল সোয়া ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বৈঠকটি শুরু হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এতে ইসির চার কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত আছেন।
অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমডি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বিজিবি প্রতিনিধি, ডিজিএফআই পরিচালকসহ বিভিন্ন আইনরশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।