নোয়াখালী শহরের বালিংটন মোড় এলাকায় সকালে বাসায় ঢুকে মা ও এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত মা–মেয়ে হলেন বালিংটন মোড় এলাকার ফজলে আজিম ওরফে কচির স্ত্রী নুর নাহার বেগম (৪০) ও তাঁর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে ফাতেমা আজিম ওরফে প্রিয়ন্তী (১৬)। এর মধ্যে নুর নাহার ঘটনাস্থলে মারা যান। আর তাঁর মেয়ে ফাতেমাকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত নুর নাহারের স্বামী ফজলে আজিম বলেন, তিনি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। আজ সকাল ৯টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জানতে পারেন, তাঁর বাসায় ডাকাত ঢুকেছে। তাৎক্ষণিক তিনি বাসায় এসে স্ত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে জানতে পারেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মেয়েও মারা গেছে।
ফজলে আজিম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি বাসা ভাড়া নিতে এসেছিলেন। তখন তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। ওই ব্যক্তিকে পরে আসতে বলা হয়েছিল। ওই ব্যক্তি কিংবা তাঁর লোকজন ডাকাতির উদ্দেশ্যে ভাড়াটিয়া সেজে বাসায় ঢুকে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। এলাকায় কারও সঙ্গে তাঁর কোনো শত্রুতা নেই। দুই তলা বাড়িটি তাঁর নিজের। নিচতলায় একটি পরিবার ভাড়া থাকে।
ফজলে আজিমের বাসার একজন ভাড়াটিয়া বলেন, সকালে দ্বিতীয় তলা থেকে চিৎকার করতে করতে ফাতেমা রক্তাক্ত অবস্থায় দরজার সামনে আসে। পরে দরজা খুলে দিলে সে মেঝেতে পড়ে যায়। ওই অবস্থায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, শহরের বার্লিংটন মোড় এলাকা থেকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত এক মেয়েকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে আনার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। লাশ মর্গে আছে। একই ঘটনায় নিহত তার মায়ের লাশ মর্গে আনার পর দুজনের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।
সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, তিনি নিজে ঘটনাস্থলে আছেন। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেনসহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা সেখানে বিষয়টি দেখভাল করছেন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তবে এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, ওই বাসা থেকে এক যুবক বের হওয়ার সময় তাঁকে আটক করতে চাইলে প্রথমে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে তাঁকে কিছু দূর ধাওয়া করে আটক করেন তাঁরা। ওই যুবকের পরনে থাকা জামা-কাপড়ে রক্তের দাগ দেখা গেছে। পরে আশপাশের লোকজন ফজলে আজিমের বাড়ির দোতলায় গিয়ে দেখেন, তাঁর স্ত্রীর লাশ পড়ে আছে।