মো. আব্দুল কাইয়ুম : বরই মানেই চোখ বন্ধ করে স্বাদ উপভোগ আর ভর্তা মানেই জিহ্বাই জল আসা। লবণ মরিচে বরই ভর্তা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বসন্তের কাক ডাকা দুপুরে টক বরই হোক বা তার আচার হোক- দুটোই সমান কদরের। কিন্তু বছর জুড়ে তো আর বড়ই পাওয়া যায় না। তাই বড়ইয়ের মৌসুম থাকতেই বড়ই উৎসবের আয়োজনটা হলে হাতের নাগালে পেয়ে বরই ভর্তার স্বাদটা পেতে পারে ছোট বড় বৃদ্ধ বয়সী সবাই। এক্ষেত্রে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে হতে পারে বরই ভর্তা উৎসব।
টক মিষ্টি স্বাদের বরই কার না ভালো লাগে? বসন্তের এই উচাটন দুপুরে লবণ মরিচের বরই ভর্তা সামনে দেখলে আপনার জিহ্বাকে কি ঠিক থাকতে পারবেন ? অবশ্যই না। তাই বলে মোটেই ভাববেন না ফলটি খেতে শুধুই সুস্বাদু; এটি পুষ্টিগুণেও দারুণ সমৃদ্ধ।
তথ্য মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম বরইয়ে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৭৯ কিলোক্যালরি, শর্করা ২০ দশমিক ২৩ গ্রাম, আমিষ ১ দশমিক ২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৭৭ দশমিক ৮৬ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪০ আইইএ, থায়ামিন শূন্য দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লোবিন শূন্য দশমিক শূন্য ৪ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন শূন্য দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ৬ শূন্য দশমিক শূন্য ৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম, লোহা শূন্য দশমিক ৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ শূন্য দশমিক শূন্য ৮৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম, জিংক শূন্য দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম।
উৎসবটা শুধু আনন্দ বা স্বাদ নেয়ার জন্যই করতে হবে। মানুষের মধ্যে বরই এর গুণাগুণ তুলে ধরতেও আয়োজনটি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দরকার প্রশাসনের আন্তরিকতা।
বরইয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আসুন জেনে নেই:
১. বরইয়ের উপাদানগুলো শরীরে শক্তি জোগায়। অবসাদ কেটে যায় দ্রুত। তাই যাঁরা অবসাদে ভুগছেন, তাঁরা বরই খেতে পারেন।
২. বরইয়ের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে এটি সংক্রামক রোগ দূর করতে সহায়তা করে। যেমন: টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্বায় ঘা, ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া ইত্যাদি দূর করে।
৩. বরইয়ের রসকে ক্যানসাররোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ফলের রয়েছে ক্যানসার কোষ, টিউমার কোষ ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার অসাধারণ ক্ষমতা।
৪. যকৃতের নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এই ফল। যকৃতের কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
৫. কুল অত্যন্ত চমৎকার একটি রক্ত বিশুদ্ধকারক। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টক বরই উপকারী ফল। ডায়রিয়া, ক্রমাগত মোটা হয়ে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে কাজ দেয় এই ফল।
৬. মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে কুল। এ ছাড়া হজমশক্তি বৃদ্ধি ও খাবারে রুচি বাড়িয়ে তোলে এ ফল।
৭. বরই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। এটি যকৃতে সুরক্ষা বর্ম তৈরি করে এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে।
৮. বরই বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়। বরই বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয় শরীরে।
৯. ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে কোমল করে বরই। রোদে পোড়া ত্বক সুরক্ষার কাজেও কার্যকর।
১০. বরই কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে। ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে।