পদ্মা সেতুর নকশা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। এখন থেকে সেতু বিভাগের অনুমতি ছাড়া কেউ পদ্মা সেতুর ডিজাইন বা নকশা ব্যবহার করতে পারবেন না। এ জন্য শিগগিরই পদ্মা সেতুর নকশা পেটেন্ট করা হবে। এর ফলে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক উভয় মাধ্যমে সেতু বিভাগরে পূর্বানুমতি ছাড়া পদ্মা সেতুর নকশা ব্যবহার বা প্রকাশ করা যাবে না। সম্প্রতি সেতু বিভাগ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ বিভাগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কিত একটি পর্যালোচনা সভা হয়। সভায় উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে পদ্মা সেতুর ডিজাইন ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনও প্রচার করছে। এর মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান সেতুটির নকশা ব্যবহার করে নিজেদের আর্থিক স্বার্থ হাসিল করছে যা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তাই পদ্মা সেতু দ্রুত পেটেন্ট করতে হবে। একইসাথে সেতু বিভাগের অনুমতি ছাড়া পদ্মা সেতুর ডিজাইন ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করে এ বিষয়টি সবাইকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, পদ্মা সেতু দেশের একটি গৌরবের বিষয়। কিন্তু অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে পদ্মা সেতুর ডিজাইন ব্যবহার করে অনেকেই চটকদার বিজ্ঞাপন তৈরি করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সেতুর কাজে জড়িত না থেকেও এসব বিজ্ঞাপনে নিজ নিজ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের গুণকীর্তন করছে। আবার অনেকেই সেতুর মূল অবকাঠামো নিজেদের কোম্পনির সিমেন্ট বা স্টিল দিয়ে তৈরি বলে বিজ্ঞাপন বানাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেতুর পাইলিং নিয়েও প্রতারণার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত ও অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সেতুর ফাস্ট ট্র্যাকের অগ্রগতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, এ সেতু বাংলাদেশের গর্বের বিষয়। পদ্মা সেতু বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজ উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু এ সেতুকে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করতে চাইছেন কিছু ব্যবসায়ী। এটি হতে দেয়া যাবে না। তাই ভবিষ্যতে যাতে স্বপ্নের সেতুকে ব্যবহার করে কেউ যাতে ফায়দা না লুটতে এবং মানুষকে প্রতারিত করতে না পারে সে জন্য এর ডিজাইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতু পেটেন্টসহ অনুমতি ছাড়া সেতুর নকশা প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে।
এ দিকে ৩০ হাজার কোটি টাকারও অধিক ব্যয়ে নির্মিতব্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ বলে সভায় জানানো হয়। এতে জানানো হয়, জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক এবং সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ সম্পূূর্ণ হয়েছে। মূল সেতু ও নদীশাসন কাজের ক্রমপুঞ্জীভূত ভৌত অগ্রগতি যত্রাক্রমে ৭৩ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ। তা ছাড়া প্রকল্পের পরিবেশ ও পুনর্বাসনকার্যক্রম চলমান আছে। এডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণের বিষয়ে সভার সভাপতি নির্দেশনা প্রদান করেন বলে জানা গেছে। সভায় আরো জানানো হয়, প্রকল্পের মূল অ্যালাইনমেন্ট বরাবর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ট্রাঞ্চের অতিরিক্ত প্রায় ৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ইতোমধ্যে ওই ৪ একর ভূমির ভিডিও ধারণ সম্পন্ন করেছে। শিগগিরই যৌথ জরিপ সম্পন্ন করা হবে।