নেত্রকোনায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদল কর্মী মো. আমজাদ হোসেন (২৭) নিহত হওয়ার পৌনে চার বছর পর নেত্রকোনা মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন খান ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মামুনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত আমজাদ হোসেনের বড় ভাই মো. দেলোয়ার হোসাইন বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করেন।
ওসি বোরহান উদ্দিন বর্তমানে কেন্দুয়া সার্কেল কার্যালয়ে পরিদর্শক এবং মামুন খুলনা রেঞ্জে এসআই হিসেবে কর্মরত। নিহত আমজাদ নেত্রকোনা শহরের হোসেনপুর এলাকার মৃত আলী হোসাইনের ছেলে। তিনি জেলা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
স্থানীয় ও কেন্দ্রঘোষিত সব কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ২১ মে রাত ৩টার দিকে নেত্রকোনা মডেল থানার তৎকালীন ওসি বোরহান উদ্দিন ও এসআই মামুনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য ছাত্রদল কর্মী আমজাদের বাড়ি ঘেরাও করেন। পরে আমজাদের বড় ভাই মনির হোসাইনকে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর আমজাদকে ঘুম থেকে তুলে হাতকড়া পরানো হয়। এ সময় আমজাদ তাঁর স্ত্রীর ওড়না পরা অবস্থায় ছিলেন।
এ অবস্থায় দুই ভাইকে বেধড়ক মারধর করতে করতে গাড়িতে তোলেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা ১০ মিনিটের মতো তাঁদের নিয়ে মহল্লার মধ্যে ঘোরাতে থাকেন। পরে মনিরকে ছেড়ে দিয়ে আমজাদকে চোখ বেঁধে নিয়ে যান। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে সদর উপজেলার মেদনি ইউনিয়নের বড়ওয়ারি সেতু এলাকায় মাদক উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে আমজাদকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।
নিহত আমজাদের ভাই দেলোয়ার হোসাইন আজ বিকেলে নেত্রকোনা প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের মামলার আবেদনের কপি দেন। এ সময় তাঁর আইনজীবী ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফা জেসমিন, ঢাকার আইনজীবী নূরুল ইসলাম, সাইফুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘বিচারবহির্ভূতভাবে আমার ছোট ভাই আমজাদকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে মাদক ব্যবসার অভিযোগ এনে অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্য গুলি করে হত্যা করেছেন। মামলার উল্লেখিত আসামিরা তখন নেত্রকোনা সদর থানায় কর্মরত থাকায় বিপদের আশঙ্কায় মামলা করতে সাহস পাইনি। এখন তাঁরা ওই থানায় কর্মরত না থাকায় আইনজীবীদের পরামর্শে আদালতে মামলার আবেদন করেছি। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।’
আইনজীবী আরিফা জেসমিন বলেন, মামলার আবেদনে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর ১৫ (২) ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে এ নিয়ে শুনানিও হয়েছে। বিচারক পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় মামলার আবেদন করার পর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নিহত আমজাদের ভাই (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ও বাদীর আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে নেত্রকোনা প্রেসক্লাবে
বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় মামলার আবেদন করার পর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নিহত আমজাদের ভাই (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ও এ বিষয়ে পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন খান বলেন, খুন, অস্ত্র, বিস্ফোরক, দ্রুত বিচার, চুরি, মাদকসহ ১৩টি মামলার আসামি ছিলেন আমজাদ।
মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৫০০ গ্রাম হেরোইন, ৩০৫টি ইয়ারা বড়ি, দুটি কার্তুজ ও একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়েছিল। এ সময় তিনি পুলিশের ওপর হামলা চালান। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
নিহত আমজাদের মামা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বলেন, ‘আমার ভাগনে কোনো দিন একটি সিগারেটও খায়নি। এলাকায় খবর নেন। সে কোনো মানুষকে নির্যাতন করেছে কেউ বলতে পারবে না। মামলাগুলো সব রাজনৈতিক মামলা। বিএনপি করত বলেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সম্পাদক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, আমজাদ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সর্বশেষ রাজনৈতিক মামলায় আমার সঙ্গে আসামি ছিলেন। যদি তিনি আসামি হন বা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী বিচার করা যেত। এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।