পাকিস্তান আক্রমণ করবে ভারত?

ভারত শাসিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় এক স্বাধীনতাকামী যোদ্ধার আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত এ জন্য পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করেছে। পাকিস্তানকে কীভাবে মোক্ষম জবাব দেয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই সাথে রয়েছে জনমতের চাপ আর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয় উদ্যোগ এরই মধ্যে আটকে গেছে। অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানকে দেয়া বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার করেছে ভারত। সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে পাল্টা সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে।

এ ক্ষেত্রে বিশ্লেকেরা মনে করছেন, যেসব সামরিক বিকল্প আছে, তার কোনোটাই খুব সহজ হবে না ভারতের পক্ষে। হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে উচিত জবাব দিতে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে সমর্থকদের চাপের মুখে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবারের হামলার পর মোদি হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, যারা জড়িত তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। পাল্টা পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে যেকোনো সিন্তান্ত নেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন তিনি।

২০১৬ সালে উরিতে একটি সেনাঘাঁটিতে হামলায় ১৯ সেনা নিহতের ঘটনায় পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ভারত। এই অভিযানে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সামরিক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। তবে পাকিস্তান ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সম্ভাব্য দু’টি সামরিক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছে। এই দু’টি পদক্ষেপই পারমাণবিক শক্তিধর দু’টি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধই বলা যায়। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ছোট আকারের হামলা এবং দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় কিছু পাহাড় বা অঞ্চল দখল করা। উভয় অভিযানেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরে সীমিত বেসরকারি স্থাপনায় বিমান হামলা যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার জি পার্থসারথি জানান, সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের কথা প্রকাশ্যে আলোচনা করা যায় না। তিনি বলেন, আমরা বলেছি পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। যৌক্তিক কারণে আমরা অবশ্যই কিভাবে এটা করা হবে তা প্রকাশ করব না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের বিরুদ্ধে চরম কোনো পদক্ষেপ নেয়া কঠিন সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, শাসক পক্ষের ওপরে যথেষ্ট চাপ আছে বিরোধী পক্ষ থেকে যেমন, তেমনই জনমতও তৈরি হয়েছে যে এই হামলার প্রতিশোধ নেয়া দরকার। সেদিক থেকে মনে হয় সামরিক বিকল্পের দিকেই ভারত ঝুঁকবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেরকম প্রতিশোধ নিয়ে আবারো পাল্টা আঘাত আসবে কিনা। কারণ দু’টিই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী মনে করেন, যেভাবে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে, সেই একই পথে প্রত্যাঘাত করা যায় কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত ভারত সরকারের। তিনি বলেন, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর সামরিক- এই চারটে বিকল্পই আছে, যেগুলো নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে আরো একটা পদ্ধতি আছে, যেটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে উচিত পথ বলে মনে করিÑ নন স্টেট অ্যাক্টর্সদের ব্যবহার করা হোক। যেভাবে পাকিস্তান থেকে আত্মঘাতী হামলা হচ্ছে, সেই একইভাবে এ দিক থেকেও প্রত্যাঘাত করা হোক।

দক্ষিণ এশিয়া সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক অজয় সাহনীর মতে তাৎক্ষণিক প্রত্যাঘাত কোনো কাজে আসবে না। দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ছাকড়াা কোনও বিকল্প ভারতের হাতে নেই। তিনি বলেন, যেসব বিকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো সবই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। একটা হামলার প্রতিক্রিয়া নিয়েই ভাবা হচ্ছে। কৌশলগত পদ্ধতি নিয়ে কারো ভাবনা নেই। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা এভাবে করা যায় না।
সাহনী জানান, গত বছর মার্চে প্রতিরক্ষা বিষয়ক লোকসভার স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট দিয়েছিল যে সামরিক বাহিনীর ৬৮ শতাংশ সরঞ্জাম বহু পুরনো ও সেকেলে। এমনকি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বাধলে মাত্র ১০ দিন পর্যন্ত লড়াই করার মতো গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে ভারতের।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আল জাজিরা

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top