আওয়ামীলীগের নেতা ও এলাকার জামাই পরিচয় দিয়ে ১ হাজার মানুষের নিকট থেকে জনপ্রতি ২২শ করে টাকা নিয়ে মাসে ২৫ কেজি চাল ২৫ কেজি আটা দেয়ার কথা বলে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এক জামাই। ইউনিয়ন পরিষদের পিছনের গ্রামে ৩ মাস ধরে এমন প্রতারনার ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও এলাকার কিছু প্রভাবশালী জামাইয়ের প্রতারনার কাজে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারনার ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের কুশমাইল টেকিপাড়া গ্রামে।
এলাকাবাসী জানায়, ফুলবাড়ীয়া পৌর সদরের চানাচুর মিল নাম্ক স্থানের মৃত শামছুল হকের মেয়ে নার্গিস আকতারের ৭ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে হয় ময়মনসিংহ নগরীর শম্ভুগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশের আলী খানের পুত্র জসিম উদ্দিন খানের। ২ বছর সংসার করার পর জসিম উদ্দিন নার্গিসের কোন খবর নিত না। ৩ মাস আগে কুশমাইল টেকিপাড়া গ্রামে মামা শ্বশুড় ইসশাইল হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে মামা শ্বশুড় বাড়ীর এলাকার অসহায় মানুষকে সহায়তার জন্য জনপ্রতি ২২শ করে টাকা নিয়ে ২৫ কেজি চাল ও ২৫ কেজি আটা দেয়ার কথা বলে মানুষদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন শুরু করেন। ঐ এলাকায় সদস্য সংগ্রহ করার জন্য নিয়োগ করা হয় ১০ জন ডিলার। প্রতি ডিলার ১শ জন লোকের কাছ থেকে ২২শ টাকা করে উত্তোলন করেন। কিছু লোককে ১ম ও ২য় কিস্তির চাল আটা দিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেন। এলাকার মানুষ ত্রান নিয়ে জানতে তিনি নিজেকে গাজীপুর আওয়ামী যুবলীগের নেতা পরিচয় দিতেন। এক সময় মামা শ্বশুড় বাড়ীতে হেঁটে আসা জামাই হঠাৎ করে মুজিব কোর্ট পড়ে প্রাইভেট কার নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোলা হয় শাখা। সস্তায় চাল আটা পেয়ে খুশিরা নলকূপ ও পাকা ঘর দেয়ার প্রলোভনে মোটা অংকের টাকা দেয়া শুরু করেন।
খবর পেয়ে বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিকালে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম সরেজিমন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতারক জসিমকে না পেয়ে অফিসে দেখা করার জন্য তার লোকজনকে বলে আসেন। ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার যাওয়ার পর থেকে গা ঢাকা দেন প্রতারক জামাই জসিম।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে প্রতারক জসিমের মামা শ্বশুড় বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, অর্ধ শতাধিক অসহায় পুরুষ মহিলা চাল আটার জন্য বাড়ীতে অবস্থান করছেন। প্রতারক জসিমের লাপাত্তার খবর পেয়ে ডিলারদেরকে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বাকতিন্ডা করতে দেখা গেছে। ডিলার দেলোয়ারের স্ত্রী জোসনা খাতুন জানান, ১শ জনের তালিকা করে চাল আটা বিতরণ করা হচ্ছে। ২০ জন বাদে সকলের কাছ থেকে তৃতীয় কিস্তির টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতারক জসিম আর ফিরে না আসলে টাকা ফেরত দিবে কে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নাই।
আবুল কাশেম জানান, তার স্ত্রী লাভলী আকতার ডিলার হিসাবে ১শ মানুষের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। আমি নিজে উপস্থিত থেকে মালামালও বিতরণ করেছি। তার আশ্রয় প্রশ্রয়েই এ প্রতারনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি গাড়ীর মিস্ত্রী হিসাবে ঢাকায় কাজ করি। জসিমের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার নিজাম উদ্দিন জানান, শুরুতে জসিম আমার কাছে এসেছিলেন। আমি চেয়ারম্যানের কাছে যাওয়ার জন্য বলেছি।
কুশমাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ বাতেন পুলু জানান, আমার ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে গরীব মানুষের সাথে এমন প্রতারন হচ্ছে এটা আমার জানা নেই। তবে লোকমুখে শুনার পর প্রতারক জসিমকে সাক্ষাৎ করার জন্য বলা হলেও সে আর আসে নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম জানান, অসহায় মানুষদের কাছ থেকে প্রতারনা করে টাকা নেয়ার বিষয়টি যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।