উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালনের সময় শিক্ষার্থীর সুপারভাইজার না হয়েও অবৈধভাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদানে উদ্যত হন তিনি। পরে অনিয়মের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় পরেন শাস্তি মুখে। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারোয়ার আকরাম আজিজের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভারপ্রাপ্ত থেকে এবার বাগিয়ে নিতে চান খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়ার। সেজন্য জোড় প্রচেষ্টাও চালাচ্ছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকাকালীন সময়ে নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মে জড়িয়ে পরেন তিনি। বিশ্বিবদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে শাস্তির মুখে পরেন। সিন্ডিকেট ১৩ তম অধিবেশনের সিদ্ধান্ত মতে ব্যক্তি পর্যায়ােন্নায়নের ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ােন্নায়নের সময় পর্যায়ােন্নয়নের নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য নির্ধারিত সময়ের ৩(তিন) বছর পর ব্যক্তি পর্যায়ােন্নায়ন প্রদানের কথা বলা হয়। এছাড়া অধিক শিক্ষা ছুটি শেষে যােগদানের তারিখ হতে কার্যকর সাপেক্ষে পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও এম.এস. (স্নাতকোত্তর) কোসের সকল শিক্ষা কার্যক্রম (যেমন পাঠদান, ক্লাশ গ্রহণ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, খাতা দেখা, সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন ইত্যাদি) থেকে তাকে বিরত রাখা হয়।
অধ্যাপক আকরাম আজিজ পিএইচ.ডি. ডিগ্রি ছাড়াই কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির আর্শীবাদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হন। এছাড়াও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি একাধিকবার বিভিন্ন অনৈতিক ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়ায় দোষী সাব্যস্ত হন। দোষী সাব্যস্ত হলে ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বৈধভাবে ছাত্রের সুপারভাইজার না হয়েও তিনি ছাত্রকে এম.এস. ডিগ্রি প্রদানে উদ্যত হন। আবার ছাত্র জীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কর্মজীবনে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সক্রিয়ভাবে কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায় নি।
অভিযোগকারীরা বলেন, অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার এবং রেজিস্ট্রার নিয়োগ হবে এ যেন এক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তা ব্যক্তিরা যেন এসব বিষয়ে কিছুটা উদাসীন বলে মনে হয়। তা না হলে বিতর্কিত এসব ব্যক্তিরা সেইসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যাচ্ছে কিভাবে?? বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে একইসাথে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে প্রয়োজন হয়। পিএইচডি ডিগ্রী বিহীন একজন অধ্যাপকের বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে লিঁয়াজো করে শিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নিতে তার সেই ধরনের সক্ষমতা থাকবার কথা না। সারোয়ার আকরাম আজিজ আরো বড় ধরণের দায়িত্ব পেলে যে নয় ছয় করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম করবেন না সেই বিষয়ে কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ যখনি তিনি ক্ষমতা পেয়েছেন সেসকল জায়গায় অনিয়মের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যে চরিত্রকে আইডল মেনে নিজেদের চরিত্রে সেই ছাপ রাখতে পারে এমন ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন গুণী ব্যক্তিকে খুঁজে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। যিনি হবে সৎ, প্রাশাসনিকভাবে দক্ষ, গবেষণায় পারঙ্গম, শিক্ষার্থীবান্ধব এবং একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। এদিকে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই মুহূর্তে বিশ্বিবদ্যালয়ের সামগ্রিক অবস্থা এগিয়ে নিতে ডক্টরেট, পোস্ট ডক্টরেট ও মাধুর্যময় চরিত্রের অধিকারী এমন একাডেমিশিয়ান ব্যক্তিত্বকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের দাবি জানান অভিযোগকারীরা।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আকরাম আজিজ বলেন, সে সময়ে সিন্ডিকেটের কিছু ভুল বুঝাবুঝি ছিল। পরে সিন্ডিকেট আমাকে নিঃশর্ত মার্জনা ঘোষণা করে। সেসব কাগজপত্র আমার কাছে আছে। বিভিন্ন কারণে আমি থিসিস জমা দিতে না পারায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারিনি।