আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ফাইনাল খেলা হবে ডিসেম্বরে। আসল খেলা হবে রাজপথে। দেশবিরোধী অপশক্তির মোকাবেলা হবে। যারা মা-বোনের বুক খালি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা হবে। যারা আগুনসন্ত্রাস করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা হবে। কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ানো হবে না, কোনো অপশক্তিকে ছাড় দেয়া হবে না।
শনিবার (৫ নভেম্বর) কুমিল্লা টাউন হলে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এ সব কথা বলেন।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, লাঠিতে জতীয় পতাকা বেঁধে আন্দোলনের নামে লাল সবুজের পতাকার অবমাননা করেন। এই পতাকার অবমাননা দেশের মানুষ মেনে নেবে না।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়াউর রহমান জড়িয়ে তিনি বলেন, জিয়াই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। জিয়া জড়িত না থাকলে খুনিদের দুঃসাহস হতো না বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করার। পাকিস্তানিরাও যাকে হত্যা করতে পারেনি, হত্যা করার সাহস পায়নি, জিয়ার মদদে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। মোস্তাক সরকারের সাথে আগেই আঁতাত ছিল জিয়ার। সেই খুনিদের পুরস্কৃত করেন জিয়াউর রহমান। ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডও সেই ধারাবাহিকতায় করা হয়। খুনিদের বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন জিয়া।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, পৃথিবীতে সরকার পরিবর্তন হয়, এতে দেখা যায় সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান নিহত হন। কিন্তু বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আঁতাত করে সপরিবারে জাতীর জনককে হত্যা করে এদেশ থেকে আওয়ামী লীগের নাম মুছে দিতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, এখন বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছে। আমাদের খাদ্য সংকটও নেই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার এমপি।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো: আব্দুর সবুরসহ প্রমুখ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাত।
সম্মেলন দুই সংসদ সদস্যের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ওবায়দুল কাদেরের উদ্বোধনী বক্তব্যের সময় দুই সংসদ সদস্যের অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।
শনিবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ সড়কে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানার অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাঁধে।
দলীয় নেতা–কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলনে ঢুকতে গেলে আঞ্জুম সুলতানাকে বাধা দেয়া হয়। সম্মেলনস্থলে ঢুকতে না পেরে তিনি সেখান থেকে ফিরে যান। এর কিছু সময় পরই সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এ সময় নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। টাউন হল মাঠের বাইরে অন্য সড়কে ঝামেলা হয়েছিল। প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।
আঞ্জুম সুলতানা বলেন, আমাকে সম্মেলনে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরে আমি চলে আসি।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার ও সম্পাদক রিফাত
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের সমর্থনের ভিত্তিতে সদর আসনের এমপি হাজী বাহারকে সভাপতি ও আরফানুল হক রিফাতকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি। উভয়ই মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।