গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বিক্রির উদ্দেশে আনা জেমি খানম (১৫) এক কিশোরী অল্পের জন্য রক্ষা পেল। সে নেত্রকোনা জেলার মহনগঞ্জ উপজেলার বড়ান্ত গ্রামের মৃত জাকারিয়ার মেয়ে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, তাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বিক্রির জন্য আনা হয়েছিল। তবে অবস্থা বেগতিক তার সাথে আসা প্রেমিক চম্পট দিয়ছে।
এ ঘটনায় সহযোগিতার দায়ে রোববার দুপুরে এলাহি মিয়া (২৫) নামের এক যুবকের এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে কিশোরগঞ্জ জেলার কোটিয়াদি উপজেলার পশ্চিম চাওলা গ্রামের মো. মিলন মিয়ার ছেলে। এলাহি সাভার এলাকায় অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।
উদ্ধার হওয়া কিশোরী জানায়, সে নেত্রকোনো জেলার বড়ান্ত আদর্শ বিদ্যালয় থেকে গত বছর জেএসসি পাস করেছে। ৭ বছর আগে তার বাবার মৃত্যু হয়। তার মা নিয়ে ঢাকা সভার এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে সেখানে বসবাস করত। গত ৬ মাস আগে তার মা পুনরায় বিয়ে করে অন্য সংসারে চলে যায়। এতে তারা ৩ ভাই-বোন অসহায় হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকার তাগিতে সে লেখাপড়া ছেড়ে সাভার এলাকার এসকে কবির মাস্টার গার্মেন্টসে কাজ নেয়, ওই এলাকায় বসবাস করে। একপর্যায়ে সাভার পানপাড়া এলাকার বাবুল শেখের ছেলে অভি শেখের (১৮) সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী অভি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে জানায়, আপাতত তার পরিবার এ বিয়ে মেনে নেবে না। তাই গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় তার এক খালাবাড়ি আছে। সেখানে তারা বিয়ে করবে। অভির এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় জেমি।
এদিকে গত শনিবার অভি তার বন্ধু এলাই মিয়ার সাথে জেমিকে দৌলতদিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে বলে, তোমরা দৌলতদিয়ায় ঘাট নদী পার হয়ে গেল আমার খালা এ তোমাদের নিয়ে যাবে। এলাহি ও জেমি দৌলতদিয়া এসে একটি খাবার হোটেলে বসে খাওয়া-দাওয়া করে সেখানেই অভি’র জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। হোটেল কর্মচারীদের সন্দেহ হলে তারা পাশ্ববর্তী নৌপুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে অভির ফোনে কল করে কথা বলে। ঘটনায় পুলিশ জড়িয়ে পড়েছে অভি বুঝতে পেরে ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে ফেলে। শনিবার সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ সেখানে পৌঁছে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে ওই কিশোরীকে বিক্রির জন্যই কৌশলে দৌলতদিয়ায় আনা হয়েছিল। রোববার দুপুরে আটককৃতদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবদুল্লাহ আল মামুন আটক এলাহিকে এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন এবং কিশোরীকে তার বৈধ অভিভাবকের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।