শিক্ষার্থীদের নিয়ে একপ্রকার খাবার ব্যবসা শুরু করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দফায় দফায় খাবারের দাম বৃদ্ধি করছে হলের ডাইনিং কর্তৃপক্ষ। তবে খাবারের মানের দিকে নেই কোনো নজর। ভাত এবং তরকারির পরিমাণ দাম অনুসারে যৎসামান্য।
এদিকে হলের গরীব শিক্ষার্থীদের পূর্বের তুলনায় বর্তমান দামে খাবার কিনে ক্ষেতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানা যায় একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে। বিগত সময়ে যে খাবারের দাম ২০ টাকা ছিল তা বর্তমানে ২৫ টাকা এবং যে খাবারের দাম ২৫ টাকা ছিল তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রতি প্লেট ভাতের মূল্য ৮ টাকা রাখা হচ্ছে। আর ডিমের মূল্য ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, ” বাহিরের হোটেলগুলোতে খাবারের দাম অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ বেশি দেওয়া হলেও ডাইনিং-এ মাছ, মাংসের পিস দামের তুলনায় কম দেওয়া হয়। সাথে তারা যে মশলা ব্যবহার করে তা স্বাস্থ্যকর নয়। খাবার খেলে সাময়িক জ্বালাপোড়া করে গলায় এবং পেটে। এছাড়া তারা যে ফ্রী-তে ডাল দেয়। সেই ডাল পাতলা এবং তা স্বাস্থ্যর জন্য ভালো নয়। খাবার শেষে প্লেটগুলো ফ্লোরে রাখা হয় এবং বিভিন্ন সময়ে বিড়ালকে সেই প্লেটগুলোকে চাটতে দেখা যায়। এতে পরবর্তীতে ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে শিক্ষার্থীদের রোগ পর্যন্ত হতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানোয়া রাব্বী প্রমিজ জানায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি হলে ডাইনিং এ খাবারের মানের গুণাগুণ এবং তার সাথে সামঞ্জস্য করে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দামটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে এর কোনটাই নাই। দামে সব কিছুর আধিক্য তারপরো এক পিস মুরগি ৩০ টাকায় কিনতে হয়। তাহলে এতো সামান্য পিস দিয়ে খেয়ে বাঁচা গেলেও পুষ্টির ঘাটতি থেকেই যায়।তারপরো আমাদের খেতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নাকি দেশের সম্পদ কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে খাবার এবং থাকার জায়গাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেজায়গায় সবথেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো সুস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার। তার কতটুকুই বা আমরা পাই।”
হলের ডাইনিং-এর মালিক আল-আমিনের সাথে এসব বিষয়ে কথা বললে তিনি জানায়, ” বাজারে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় ডাইনিং-এ খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। খাবারের পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে খাবার নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে খাবারের মান বৃ্দ্ধিতে রাঁধুনীর সাথে কথা বলবো।”
হল প্রশাসন আপনাদের ভর্তুকি দেয় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডাইনিং-এর মালিক বলেন, ” কোনো ভর্তুকি আমাদের দেওয়া হয়না। বরং আমাদের ডাইনিং-এর ভাড়া বাবদ ৬ হাজার করে প্রতি মাসে দিতে হয়। আর আমার আগে যিনি ডাইনিং চালিয়েছেন তিনি জামানতও দিয়েছিলেন। যার কারণে আমাকে আর জামানত দিতে হয়নি। তবে প্রতি মাসে টাকা দিতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি ভর্তুকি দেওয়া হয়, তাহলে আমরা খাবারের দাম কমাতে পারবো।”
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওয়ালাদার বলেন, ” আমি এবিষয় নিয়ে হলের ডাইনিং মালিকের সাথে কথা বলবো এবং অতিদ্রুত এর সমাধানের ব্যবস্থা করবো। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ডাইনিং-এ কর্মচারীর ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছি। এটি বাস্তবায়িত হলে খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।”