কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর ওপর আত্মঘাতি হামলার ঘটনায় উত্তেজনায় ফুঁসছে পুরো ভারত। এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করেছে দেশটি। পাকিস্তানের মাটিতে উগ্রাবাদী সংগঠনগুলো আশ্রয় পাচ্ছে বলে অভিযোগ ভারতের, যদিও পাকিস্তান বারবারই এই অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে।
হামলার পরদিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানকে কঠোর শিক্ষা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার দিকটিও রয়েছে বিবেচনায়। মোদি জরুরী বৈঠক করেছেন তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের। শনিবার ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় বিশাল মহড়া দিয়েছে। এ নিয়ে এই মুহূর্তে আঞ্চলিক উত্তেজনা তুঙ্গে।
কিন্তু এসবের কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাচ্ছে না পাকিস্তান। দেশটির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে বিবৃতি বা বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তান এখন ব্যস্ত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমানকে আতিথিয়তা দিতে। দুই দিনের সরকারি সফরে পাকিস্তান রয়েছেন। এই সফরে সৌদি আরবের সাথে বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য চুক্তি করবে পাকিস্তান। রোববার ইসলামাবাদে পা রেখেছেন এমবিএস। তার এই সফরে পাকিস্তানের সাথে বড় বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হবে।
দ্য ডন জানিয়েছে, নিকট অতীতে ১২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। যা এই সফরেই চূড়ান্ত হবে। দুই দেশের মধ্যে তেল পরিশোধন নিয়ে আট শ’ কোটি ডলারের আরেকটি চুক্তি হবে।
এছাড়া পানি, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অর্থায়ন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, গণমাধ্যম, সংস্কৃতি ও খেলাধূলা বিষয়ে ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হবে। এছাড়া পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আরো কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে সৌদি যুবরাজের সামনে।
সফরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে একান্ত বৈঠক করবেন সৌদি যুবরাজ। এছাড়া ইমরান খানের সাথে প্রতিনিধি দল নিয়েও বৈঠক করবেন তিনি। এছাড়া প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার সাথেও বৈঠক করবেন বিন সালমান।
বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হবে। ৪০ জন সৌদি শীর্ষ ব্যবসায়ী এসেছেন বিন সালমানের সফর সঙ্গী হিসেবে, তারা পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে পৃথক বৈঠক করবেন। সোমবার পাকিস্তান ত্যাগ করবেন তিনি। সফরকালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানন নিশান-ই পাকিস্তান প্রদান করা হবে সৌদি যুবরাজকে।
দায়িত্ব নেবার পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের প্রথম পাকিস্তান সফর এটি। কিছুদিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সৌদি আরব সফর করে বিন সালমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার দেশ সফরের। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই বিন সালমান এলেন পাকিস্তানে। কয়েক দশক ধরেই রিয়াদের সাথে ইসলামাবাদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক অবস্থানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিন সালমানের সফর উপলক্ষে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের রাজকীয় নিরাপত্তা টিমের সদস্যরাও রয়েছেন এই সফরে। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে তারাও যৌথভাবে কাজ করছেন এই সফরকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিতে। সৌদি যুবরাজের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী কয়েকদিন আগে ৫টি ট্রাকে করে পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে।