অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে গণঅভ্যুত্থান আসন্ন বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, জনগণ আর ঘরে বসে বসে মাফিয়া সরকারের হাতে অসহায়ের মতো জান-মাল হারাতে চায় না। জনগণ এবার আটঘাট বেঁধে শেষ প্রস্তুতি নিয়েই সব বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। তারা শ্লোগান তুলেছে, ‘হঠাও মাফিয়া বাঁচাও দেশ- টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’ আর রাজপথে জনগণের বাঁধভাঙ্গা উত্তাল স্রোত দেখে নিশিরাতের সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরেছে। মাত্র দুইটি গণসমাবেশ অবলোকন করেই সরকারের মন্ত্রীরা প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন।
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, চট্টগ্রামের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্র দেখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় যে পরিমাণ লোক সমাগম হয়, বিএনপির সমাবেশে তাও হয়নি। বিএনপি হাঁকডাক করে মহাসমাবেশ নাম দিয়ে একটি ফ্লপ সমাবেশ করেছে।’ পৃথিবীতে সম্ভবত হাছান মাহমুদই একমাত্র তথ্যমন্ত্রী যিনি সঠিক তথ্যকে টিনের বাক্সে তালা দিয়ে অসত্য তথ্য সম্প্রচার করেন। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসী, পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যম-সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছে জনসভাস্থল ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সরকার পতনের দাবিতে ঘর ছেড়ে আসা মানুষের ঢল। কেবল দেখতে পাননি হাছান মাহমুদ। আমরা রাতকানা শুনেছি, কিন্তু এই প্রথম দিনকানা লোক দেখলাম।
‘বিএনপি ঢাকায় ১০ লাখ লোক সমাগম করলে আওয়ামী লীগ ৩০ লাখ লোক সমাগম করতে পারবে’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারা যদি ব্যাপক লোক সমাগম করতে পারেন, তবে নিশিরাতে ভোট ডাকাতি কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোট করতে হয় কেন? ভোটের দুই তিনমাস আগে থেকে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন কেন? অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেন কেন? গুম ও ক্রসফায়ারের আশ্রয় নেন কেন?
‘দুর্ভিক্ষ আসছে’ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুর্ভিক্ষ হবেই। ৭৪’ সালেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন কোথাও যুদ্ধ ছিলোনা। দেশের জনগণ জানে ও বিশ্বাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসে দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই-কেন দুর্ভিক্ষ আসবে ? দুর্ভিক্ষ আসার কারণ আপনার দল জনস্বার্থবিরোধী।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে এখন আপনি জনগণকে উপদেশ দিচ্ছেন ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি ও হারিকেন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিতে। সামনের দিনে বিদ্যুৎ-গ্যাস দিতে পারবেন না। টাকা দিয়েও খাবার মিলবে না। লুটপাট করে তার রাজভান্ডার শেষ। আমদানি করার মত ডলার নাই। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে দেশটাকে ধংস করে এখন বলছেন আদিম যুগে ফিরে যেতে। এতদিন উন্নয়ন উন্নয়ন বাজনা বাজিয়ে দেশের মানুষের কান ঝালা পালা করে এখন জনগণের হাতে হারিকেন আর ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিচ্ছেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ভেসে গেছে বঙ্গোপসাগরে। ১৪ বছর দেশ চালিয়ে দেশটাকে ভেন্না গাছে তুলে এখন তাদের বাচাল গল্পবাজ মন্ত্রীরা আর ইউরোপ আমেরিকা সিংগাপুরের গল্প শোনায় না। তবে দেশ এবং জনগনের উন্নয়ন না হলেও প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ এবং তাদের পরিবার আত্মীয়দের উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে অর্থ সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে। বিদেশে সেকেন্ড হোম করেছে-রাজপ্রাসাদ গড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।