খেলা শেষ হলেই নিয়মিত একটি অজুহাত দাঁড় করাতে আমরা পছন্দ করি। কেউ কেউ আবার এটিকে বাঙালির যে তিনটি হাত রয়েছে তার একটি হাত হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কখনো ব্যাটিং ব্যর্থতা, কখনো বোলিং আবার কখনো ফিল্ডিং ব্যর্থতার দোহায় দিয়ে শেষ। কিন্তু এই বাস্তবভিত্তিক অজুহাত থেকে বের হওয়া কি সম্ভব নয়? সিরিজ হেরে গেছি আগেই, কিন্তু এবার কি হোয়াইটওয়াশের বিস্বাদও নিতে হবে?
নিউজিল্যান্ড সফরে স্বাগতিকদের সাথে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা উঠে আসলো অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার মুখ থেকে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে কি হলো? প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় দলীয় স্কোর ছিল ২৩২ রান। ব্যাটিং ব্যর্থতা নামক ক্ষতটি নির্ণয় করে দ্বিতীয় ম্যাচে দলীয় স্কোর দাঁড়ায় ২২৬ রানে! হয়তো এবার আর কোনো অজুহাত দিতে চাননি অধিনায়ক। দায় তো আর অধিনায়কের একার না।
দলের অভিজ্ঞরা ফ্লপ করছেন গত দু’ম্যচে। যেখানে স্বাগতিকরা টপ অর্ডার দৃঢ়তায় জয় পেয়েছে দুই ম্যাচেই। সেখানে বাংলাদেশের টপ অর্ডারদের ব্যাটিং ছিল গুণে ধরা। তামিম ইকবাল দেখে শুনে শুরু করেন কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৬ বলে মোকবেলা করে ৫ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের বল উইকেটরক্ষক টম লাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৮ বল মোকাবেলা করে ৫ রান করে ম্যাট হেনরির এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে মাঠ ছাড়েন এই ওপেনার। লিটন দাস প্রথম ম্যাচে ৮ বলে করেন ১ রান। দ্বিতীয় ম্যাচেও বের হতে পারেননি ১ রানের বৃত্ত থেকে। তবে দেখার মতো ছিল, দুই ম্যচেই ওপেনাররা ছিলেন ৫ এবং ১ রানের মিলন সন্ধিতে।
দল যখন দুই ম্যাচেই মাঠে ব্যাটিং বিপর্যয়ের হামাগুড়ি দিচ্ছ্ তখন ওয়ানডাউনে মাঠে নামেন সৌম্য সরকার। কিন্তু কি জন্য তিনি মাঠে কিছুক্ষণ অবস্থান করতে নারাজ ছিলেন সেটি জানা নেই। প্রথম ম্যাচে ২২ বলে ৩০ রান ও দ্বিতীয় ম্যাচে ২৩ বলে ২২ রান করে ধৈর্য্যহীনতার পরিচয় দিয়ে সাজ ঘরে ফেরেন তিনি।
মিডল অর্ডারে ডিপেন্ডেবলখ্যাত মুশফিকুর রহিম ভালো ফর্মে ছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরের আগেও। প্রয়োজন ছিলো একটু ধৈর্যশীল ও বড় ইনিংস খেলার। কিন্তু এই মিডল অর্ডার প্রথম ম্যাচে করেন ১৪ বলের বিনিময়ে ৫ রান এবং দ্বিতীয় ম্যাচে একটু দেখে শুনে শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩৬ বল মোকাবেলা করে আউট হন ২৪ রান করে।
মিডল অর্ডার ও ম্যাচ ফিনিশিংয়ে ভূমিকা রেখে যিনি অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন বাংলাদেশকে। সেই সাইল্যান্ট কিলারখ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাট ও হাসছে না। অথচ বিদেশের মাটিতে তাঁর ব্যাটিং গড় অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো ছিলো। প্রথম ম্যাচে ২৯ বল মোকাবেলায় করেন ১৩ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ বলে খেলে আউট হন ৭ রান করে।
সাব্বির রহমান সিরিজের শুরু থেকেই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি যথাযথভাবে। প্রথম ম্যাচে ২০ বলে ১৩ রান ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৫ বলে ৪৩ রান করেন এ ব্যাটসম্যান। দলের প্রযোজনে যে বড় ইনিংস খেলেতে হয়, তা আমাদের ব্যাটসম্যানরা যেন ভুলে গেছে। মাঠে এসে দ্রুত উইকেট বিলিয়ে দেয়া। এই হলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হালচাল।
যদিও ব্যাটং ব্যর্থতাকেই দুষছেন অনেকেই। কিন্তু বোলিংয়ে কি এমন ভালো করছে তাও কি প্রশ্ন থাকে না? ব্যাটসম্যানদের দুই শতাধিক রানের পুঁজির বিনিময়ে বোলারদের যতটুকু সংগ্রাম করার কথা ছিলো তা কতটুকু সার্থক করতে পেরেছেন তাঁরা? দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৪৫৮ রানের বিপরীতে উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৪টি!
অধিনায়ক মাশরাফি প্রথম ম্যাচে ৮.৩ ওভার বোলিং করে ৩৩ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ ওভার বোলিং করে ৩৭ রান দিয়ে পাননি কোন উইকেট। সাইফুদ্দিন প্রথম ম্যাচে ৭ ওভার বোলিং করে ৪৩ রান দিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ ওভার বোলিং করে দেন ৪৪ রান। দুই ম্যাচে তাঁর কোন শিকার ছিলোনা। মোস্তাফিজ বোলিং ফিগার ছিলো প্রথম ম্যাচে ৮ ওভার বোলিং করে ৩৬ রানের বিনিময়ে কোন শিকার নেই। দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ ওভার বোলিং করে ৪২ রানের বিনিময়ে পান ২টি উইকেট। মেহেদি হাসান মিরাজ, প্রথম ম্যাচে ৮ ওভার বোলিংয়ে ৪২ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে ৭.১ ওভার বোলিং করে ৪২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রথম ম্যাচে ৫ ওভার বোলিং করে ২৭ রান দিয়ে নেন ১টি উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ ওভার বল ২৫ রান দিয়ে উইকেট ঝুলি ছিলো শূন্য।
এর মাঝে যোগ হলো, অপেশাদার বোলিং সাব্বির রহমানকে দিয়ে ব্যাক থ্রো এনে দেওয়ার চেষ্টা। প্রথম ম্যাচে সাব্বির পেশাদার বোলারদের চেয়ে বেশি বল করেন। ৭ ওভার বল করে ৪১ রান দেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ ওভার বল করে দেন ২৮ রান। বল হতে দুই ম্যাচেই ছিলেন অপেশাদার। কোন উইকেট পাননি তিনি। সৌম্য সরকারকে দিয়েও চেষ্টা চালিয়েছিলেন অধিনায়ক। সৌম্য প্রথম ম্যাচে ১ ওভার বল করে ৮ রান দেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও ১ ওভার বোলিং করেন বিনিময়ে দেন ১০টি রান। দুই ম্যাচে পাননি কোন উইকেটের দেখা।
দলে বোলার থাকা সত্ত্বেও কেন তাদের সাইডলাইনে বসে এই তামাশাগুলো দেখতে হবে? আর একটি অসহায় আত্মসমর্পণ রচনা করতে হবে?
প্রতি ম্যাচ শেষে ব্যর্থতার গল্প আমরা শুনি। কিন্তু ব্যর্থতার যে জায়গায় ক্ষত তা সমাধান হয় না কেন? প্রথম দুই ম্যাচের ব্যর্থতাগুলো ঘুচিয়ে এবার কি ফিরবে খেলায়? ক্ষত নির্ণয় করার পরও যদি ওষুধ ঠিকভাবে না লাগায়, তবে এবার যদি হোয়াইটওয়াশের শিকার হয় এর দায় কার? এ অপেক্ষায় থাকতে হবে নাকি বিস্বাদ ঘুচিয়ে মিলবে আলোর দেখা?