বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) আনার ক্ষেত্রে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। আবার সব বিভাগের মধ্যেও ঢাকা আছে শীর্ষে। প্রতিবছর দেশে আসা মোট রেমিট্যান্সের ৪৭-৪৮ শতাংশই আসছে এই বিভাগের মাধ্যমে। রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগ। আবার এই দুই বিভাগের সদর দুই জেলা চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং ঢাকা বিভাগের কুমিল্লা জেলা রেমিট্যান্স আনায় প্রায় সমানতালে এগিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স আসে ময়মনসিংহ বিভাগের মাধ্যমে। আর সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আনছে বান্দরবান ও লালমনিরহাট জেলা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে প্রবাসে শ্রমিক যাওয়ার গতি অনেকটাই থমকে গিয়েছিল। যদিও ২০২১ সাল থেকে শ্রমিক যাওয়ার গতি অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। ২০২২ সালে এসে শ্রমিক যাওয়ার গতি হয়েছে আরও জোরালো। প্রাপ্ততথ্য বলছে, ২০২০ সালে বিদেশ যান মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার ২৬৯ জন। তবে ২০২১ সালে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন বিদেশে গেছেন। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গেছেন আরও ৬ লাখ ১৫ হাজার ৫১৮ জন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোন জেলা থেকে কতজন শ্রমিক বিদেশে গেছেন সে তথ্য পাওয়া যায়নি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯১ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৫ লাখ চার হাজার তথা প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ বিদেশ গিয়েছেন ১০টি জেলা থেকে। বাকি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ প্রবাসী হয়েছেন বাকি জেলাগুলো থেকে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা জেলা। এখান থেকে গত ১৫ বছরে ৯ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ বিদেশে পাড়ি
জমিয়েছেন। এই জেলার মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১৯ কোটি ৫৬ লাখ রেমিট্যান্স আসে। আগের অর্থবছরে এই জেলার মাধ্যমে এসেছিল ১৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
শ্রমিক কর্মসংস্থানে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল চট্টগ্রাম। এ জেলা থেকে ৭ লাখ ২৬ হাজার মানুষ প্রবাসে গেছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এই জেলার মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে এসেছিল ১২১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ১৩৯ কোটি ২৮ লাখ ডলার। একইভাবে ২০০৫ থেকে ২০২০ সালে ঢাকা থেকে ৪ লাখ ৪ হাজার শ্রমিক বিদেশ যান। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক যাওয়ায় ঢাকার অবস্থান পাঁচ নম্বরে। অথচ এই জেলার মাধ্যমেই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসছে প্রতিবছর। গত অর্থবছরে এই জেলার মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল আরও বেশি, প্রায় ৮০২ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ১৮৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
বিদেশে ৪ লাখ ৯৩ হাজার শ্রমিক পাঠিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অথচ এই বিভাগ থেকে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ৬৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ৭৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ১৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অন্যদিকে বিদেশে তুলনামূলক কম শ্রমিক কর্মসংস্থানের পরও সিলেট জেলার মাধ্যমে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১০৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১৩৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
২০২০ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল থেকে ৪ লাখ ৪৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছেন। দেশটি থেকে শ্রমিক যাওয়ায় টাঙ্গাইল চার নম্বরে থাকলে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ৪৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ১০ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। বিদেশে জনশক্তি প্রেরণে এরপরেই আছে চাঁদপুর থেকে ৩ লাখ ৬৭ হাজার, নোয়াখালী থেকে ৩ লাখ ৪৯ হাজার, নরসিংদী থেকে ২ লাখ ৬ হাজার, মুন্সীগঞ্জ থেকে ২ লাখ ৫৯ হাজার ও ফেনী থেকে ২ লাখ ৩২ হাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চাঁদপুরের মাধ্যমে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ৫১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল ৬১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। নোয়াখালীর মাধ্যমে গত অর্থবছরে আসে ৬৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল ৭২ কোটি ৩১ লাখ ডলার। নরসিংদীর মাধ্যমে গত অর্থবছরে আসে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ৪০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। মুন্সীগঞ্জের মাধ্যমে গত অর্থবছরে আসে ৩৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৪৫ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আর ফেনী থেকে গত অর্থবছরে আসে ৫১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৫৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে রেমিট্যান্স আনায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এই বিভাগের মাধ্যমে গত অর্থবছরে ৯৮৯ কোটি ৯২ লাখ রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশে আসা মোট রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ৪৭ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এই বিভাগের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ১২০১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এটি ওই অর্থবছরের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় সাড়ে ৪৮ শতাংশ। রেমিট্যান্স আনায় এরপরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বিভাগের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৫৪১ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৬২২ কোটি ১৯ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট বিভাগের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ২১৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে খুলনা বিভাগের মাধ্যমে ৯৯ কোটি ডলার, বরিশাল বিভাগের মাধ্যমে ৫৫ কোটি ডলার, রাজশাহী বিভাগের মাধ্যমে ৮৯ কোটি ডলার, রংপুর বিভাগের মাধ্যমে ৬৪ কোটি ২৪ লাখ ডলার ও ময়মনসিংহ বিভাগের মাধ্যমে ৪৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে।