ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন কলেজের ৩ শিক্ষার্থী। তাদের লাশের ময়নাতদন্ত শনিবার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুশাবাড়ীয়া গ্রামের মো. বাদশা বিশ্বাসের ছেলে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি সাইদুর রহমান মোরাদ, একই কলেজের শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বলেশ্বর গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ ও যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার পাড়দিয়া গ্রামের রাখাল চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সমরেশ বিশ্বাস।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ১৮ মাইল নামক স্থানে বিদ্যুতের খাম্বাবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তারা।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মুহাম্মদ সোহেল রানা শনিবার ( ৮ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জানান, শুক্রবার রাতে জেলা শহর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে ফেরার পথে প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ হামলা করে। এ সময় ভেটেরিনারি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস সাজিবুল ইসলাম সাজিবসহ ৩ জন আহত হন। ঘটনার সময় নিহতরা সেখান থেকে মোটরসাইকেলযোগে পালাতে গিয়ে ১৮ মাইল নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের খাম্বারবোঝাই ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তারা। সংঘর্ষের কারণে নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে মত দেন ওসি।
তিনি আরও জানান এ ঘটনায় সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস আহত সাজিবুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আসামিদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি (ওসি)। কঠোর পুলিশ পাহারায় লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেন ওসি।
অপরদিকে ঝিনাইদহ হাইওয়ে পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান বলেছেন, ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। চালকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি জটিল বিধায় হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ রিপোর্ট পাঠানোর সময় কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। জেলা সভাপতি সজিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরানের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও উত্তর দেননি তারা।
ছাত্রলীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেন, সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ক্যাম্পাস বেশ কয়েক মাস ধরে অস্থিতিশীল। ডিভিএম ডিগ্রি পাওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। নিহত ও আহতরা ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ একটি গ্রুপের অনুগত ছিলেন তারা।
ঘটনার রাতে জেলা শহরের স্বর্ণপট্টি এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাগর হোসেন সোহাগের সঙ্গে দেখা করে ফিরছিলেন হতহতরা। পথে ড্রিম ভ্যালি পার্কে কাছে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে পালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩ জন।
কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস সাজিবুল ইসলাম সাজিব অভিযোগ করেছেন, আরিফসহ প্রতিপক্ষরা আমাকে মারার জন্য দীর্ঘদিন ধরে টার্গেট করে। সেই সূত্রে হামলা হয়েছে এবং দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তার।
পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে গেল
নিহত সাইদুর রহমান মোরাদের পরিবারের কান্না থামছে না। বাবা প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান। চাচা নজরুল ইসলাম জানান, তিন ভাইয়ের মধ্যে মুরাদ ছিলেন দ্বিতীয়। পশুসম্পদ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ বাবা মারা যাওয়ার পরে পড়া লেখার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরেন। মা এক বোনের সংসার তার। নিজ বাড়িতে একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছিলেন। ভালোভাবেই চলছিল সংসার।
সমরেশ বিশ্বাসের বাবা কৃষক। ছেলেকে ডাক্তার হতে উৎসাহ দিয়েছিলেন তিনি। লাশ নিতে আসেন মামাতো ভাই চণ্ডিদাস রায়। তিনি জানান, দুই ভাই দুই বোন তার। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। সব শেষ জানা গেছে, নিহতদের নিজ নিজ গ্রামে দাফন ও সৎকাজ করা হয়েছে।