তাসলিমা আক্তার লিমা। যিনি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। নিজের প্রতিবন্ধকতা যেনো তার যোগ্যতা প্রমাণে বাধা না হয়ে দাঁড়ায় তাইতো ডিগ্রির পাশাপশি অর্জন করেছেন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেলসহ কম্পিউটারের বিভিন্ন দক্ষতা। তবুও মিলছে না কোনো চাকরি।
তিন বোন ও এক ভাইয়ের পরিবারে তাসলিমা দ্বিতীয়। বাবা মো. ইদ্রিস ভূঁইয়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বাকৃবি) সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় শ্রেণির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা মোছা. মাফিয়া আক্তার একজন গৃহিনী। বাকৃবি ক্যাম্পাস এলাকাতেই থাকেন তারা। তাসলিমা ২০১৩ সালে এসএসসি, ২০১৫ সালে এইচএসসি এবং ২০২১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর এখনো দেখা মেলেনি কোনো চাকরির।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছে ফেলে তাসলিমা নিজের যোগ্যতায় স্বাবলম্বী হতে চান । কিন্তু চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাসলিমার। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার ভাইভা পর্যন্ত গিয়ে বাদ পড়তে হচ্ছে তাকে। তিনি বাকৃবির বিভিন্ন অনুষদের অফিস সহকারী পদে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাবল্যাবে অ্যাটেনডেন্ট পদে, কম্পিউটার অপারেটর, ল্যাবরেটরির বেয়ারার পদসহ অন্যান্য পদে চাকরির আবেদন করলেও আলোর দেখা মেলেনি কোনোটিতেই। কোনো কেনো ক্ষেত্রে আবেদনের পর মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত গিয়েও পূরণ হয়নি তার স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের পহেলা অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরির বেয়ারার পদে মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন তাসলিমা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিলেও প্রতিবন্ধী কোটা থাকা সত্ত্বেও ওই পদে চাকরি পাননি তিনি। এছাড়াও ২০২০ সালের ১৮ মার্চ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাবল্যাবের অ্যাটেনডেন্ট পদে আবেদন করেন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিসের কম্পিউটার অপারেটরের পদেও আবেদন করেন তাসলিমা। পরে সেগুলোতেও কোনো সাড়া পান নি।
তাসলিমার বাবা ইদ্রিস ভূঁইয়া বলেন, ২০১৮ সালে অবসরের পর থেকে অসচ্ছ্বলতায় দিন কাটছে আমার পরিবারের। পরিবারে ছেলেটি সর্বকনিষ্ঠ। বর্তমানে পরিবারে নেই কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও অবসরপ্রাপ্ত হওয়ায় পরিবারে কর্মক্ষম বলতে একমাত্র তাসলিমাই আছে। কিন্তু যথাযথ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমার মেয়েটি কোনো চাকরির দেখা পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন কর্মচারী হিসেবে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আবেদন যোগ্যতা সাপেক্ষে আমার মেয়েকে যেনো একটি চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের সাথে মানানসই এরকম আলাদা চাকরির অনেক সেক্টর আছে। তার যেহেতু প্রতিবন্ধী কোটা আছে পাশাপাশি যোগ্যতাও আছে, অবশ্যই সে চাকরি পাওয়ার যোগ্য। তবে যেসব পদে চাকরি করলে প্রতিবন্ধী হিসেবে তার সাথে মানানসই হবে, ওই পদগুলোতে আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই সেটি বিবেচনায় নেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কিছু পদে চাকরির জন্য করোনার আগে অনেক আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। প্রতিবন্ধী ওই মেয়েটিও সেগুলোতে আবেদন করেছিল বলে শুনেছি। আমি যতদূর জানি করোনার কারণে দুই বছর ধরে ওই আবেদনপত্রগুলো আর যাচাই-বাচাই করা হয়নি। আমি রুটিন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান স্যার ছুটিতে আছেন। উনি আসলে বিষয়টি হয়ত বিবেচনায় নেবেন।