শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মৌলভীবাজারের চারটি ভ্যালির ৯২টি চা বাগানে তৃতীয় দিনেও শ্রমিকরা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছে। এতে অর্ধেকে নেমে এসেছে পাতা উত্তোলন।
বৃহস্পতিবার (১১আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত জেলার জুড়ি, লংলা, মনু ধলাই, বালিসিরা চারটি ভ্যালির ৯২টি বাগানে ৩ দিনের কর্মসূচির, ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়। এতে কয়েক হাজার চা শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।
চা বাগানের শ্রমিক নেতারা জানান, দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে জীবন চালানো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। ১৯ মাস আগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও মালিক পক্ষ নতুন চুক্তি নবায়নে গড়িমসি করছেন। চুক্তি নবায়ন ও ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ২ ঘণ্টা করে আমরা ৩ দিনের কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করে আসছি।
বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের মূল্য কমে যাওয়ায় বাগান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, এ সব সমস্যা নিয়ে চা উৎপাদনে আগের চেয়ে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজনগর উপজেলার রাজনগর চা বাগানের অফিস বাংলার সামনে শ্রমিক নেতা লাচনি পাশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমিবেশে বক্তব্যে রাখেন পঞ্চায়েত সভাপতি শ্রমিক নেতা মন্টু নুনিয়া, বিজয় নুনিয়া ও বিপ্লব পাশি।
ঘুরে দেখা যায় রাজনগর, মাথিউরা, ইটা ও করিমপুর চা বাগানের শ্রমিকরা একই দাবি দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
শ্রমিক নেতারা জানান, মৌলভীবাজারের চারটি ভ্যালির ৯২ বাগানে কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে।
রাজনগর চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি মন্টু নুননিয়া বলেন, জ্বালানি তেলসহ দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অল্প মজুরিতে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। লংলাভ্যালির সভাপতি চা শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকরা চা শিল্পের নিপুন কারিগর। তারা মানবেতর জীবন যাপন করে চা শিল্পকে সজিবতা দিয়ে আসছে। বর্তমান বাজার মূল্যে স্বল্প মজুরিতে জীবন চালানো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক শ্রমিক নেতা পরেশ কালেন্দি বলেন, ৩ দিনের কর্মবিরতিতে প্রতিদিন ৫ হাজার ৫০০ কেজি চা পাতা উত্তোলন কম হচ্ছে। এতে মালিক পক্ষের ক্ষতি হয়েছে। তারা মজুরি বাড়াতে গড়িমসি করছে। চুক্তি নবায়নের ১৯ মাস চলে গেছে। তারা কোনো উদ্যেগ নিচ্ছে না। তাই আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা দাবি আদায়ের জন্য মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে আরো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এনিয়ে বিভিন্ন বাগান ব্যবস্থাপকের সাথে কথা হলে মাথিউরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো: সিরাজুদ্দৌলা বলেন, চা উৎপাদনে মালিক পক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন।
জ্বালানি তেল বিদ্যুত বিভ্রাটে উৎপাদন খরচ নাগালের বাহিরে চলে গেছে। বিশ্ব বাজারে চায়ের দামও কমে আসছে। এতে বাগান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।