রাখে আল্লাহ মারে কে? সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও বোনের মৃত্যুর পর মৃত মায়ের পেট ফেঁটে জন্ম নিয়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শিশু ফাতেমা।
হ্যা, ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মায়ের পেট ফেঁটে যে শিশুটির জন্ম হয়েছে সেই শিশুটির কথাই বলছি। সেই শিশুটি বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও লালন পালন করার মতো কেউ না থাকায় শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই গর্ভবতী মা রত্না আক্তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ও ৬ বছর বয়সী মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে আলট্রাসোনগ্রামের জন্য ত্রিশাল থেকে সিএনজি দিয়ে ময়মনসিংহে আসার সময় ট্রাক চাপায় মারা যান পরিবারের সবাই। কিন্তু এসময় অলৌকিকভাবে মা রত্না আক্তারের পেট ফেটে কন্যাশিশুর জন্ম হয়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে বাংলাদেশ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে শহরের লাবীব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে ১৮ জুলাই রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের এনআইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে শিশুটির চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এদিকে শিশুটির জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট এবং রক্তস্বল্পতা ভালো হওয়ায় ১৪ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে দুর্ঘটনার সময় শিশুটির ডান হাত এবং পায়ের ভাঙা অংশ ভালো হতে আরো দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসক।
অপরদিকে শিশুটির পরিচর্যার জন্য বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার আজিমপুরের শিশু নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় শিশু কল্যাণ বোর্ড। সেই মোতাবেক শুক্রবার সকালে শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহর নিকট শিশু ফাতেমাকে হস্তান্তর করেন। পরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে শিশুটিকে ঢাকার আজিমপুরের শিশু নিবাসে পাঠানো হয়।
শিশুর দাদা মোস্তাফিজুর রহামান জানান, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক বলেছেন, উন্নত জীবনের জন্য শিশুটিকে আজিমপুরে শিশু নিবাসে পাঠানো হয়েছে। তবে যেকোন সময় শিশু ফাতেমাকে দেখতে শিশু নিবাসে যেতে পারবে বলেও জানান তিনি।
তবে শিশু ফাতেমা উন্নত জীবনের আশার আলো দেখতে পেলেও হয়তবা এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা যখনি স্মরণ হবে তখনই তার হৃদয়কে পীড়িত করবে, এমনটিই সবার মনে ভাবনার খোড়াক জোগাচ্ছে।