ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে ভারতকে দুর্বল করা যাবে না। বরং এর হামলার জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। ফলে এ স্বাধীনতা নিয়ে সেনাবাহিনী কি পাকিস্তানে হামলা চালাবে, অন্যভাবে ব্যবহার করবে, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে আত্মঘাতি হামলাকে প্রতিবেশী দেশের ‘অনেক বড় ভুল’ বলে আখ্যা দিয়ে দেন মোদি। এ সময় তিনি নিজেদের প্রতিবেশী দেশ ও সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘তাদেরকে এর জন্য কড়া মূল্য দিতে হবে।’
মোদি আরো বলেন, ভারতের মানুষ এখন ‘পাল্টা জবাব’ চান। আর সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় গোয়েন্দা-ব্যর্থতার পাশাপাশি মোদী সরকারের সার্বিক কাশ্মীর নীতি এবং উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যর্থতার দিকেও আঙুল উঠেছে। একই সঙ্গে পুলওয়ামায় ৪৯ জন জওয়ানের হত্যার পরে দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি উঠেছে, এর বদলা চাই।
মোদির এই বক্তব্য সম্পর্কে অবশ্য রাজনীতিকরা বলছেন, সামনেই লোকসভা ভোট। যেহেতু গত পাঁচ বছর ধরে তিনি এ ধরনের বহু হুমকি দিয়েছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে নির্বাচনের হাতিয়ার বানিয়েছেন, সুতরাং মোদীর পক্ষে এই সময় সুর নরম করে কথা বলা সম্ভব নয় কোনোভাবেই। সে কারণেই পাকিস্তানকে চোখ রাঙানো ছাড়া তার সামনে আর কোনো উপায়ও ছিল না।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের পরে নয়াদিল্লি স্টেশনে নতুন ট্রেন-১৮-এর যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে ঠিক সে কাজটিই করেছেন মোদী। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে হঠাৎ পাওয়া এ আবেগকে কাজে লাগাতে তিনি বলেন, ‘এই হামলার ফলে দেশে যে-আক্রোশ তৈরি হয়েছে, মানুষের রক্ত যে গরম হয়ে উঠছে, তা বুঝতে পারছি। এর কিছু জবাব দেয়ার প্রত্যাশাও স্বাভাবিক। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে তাই এ ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।’
মোদি তার ভাষণে অবশ্য পাকিস্তানের নাম কোথাও উল্লেখ করেননি। তবে তিনি বারবার যে প্রতিবেশী দেশের কথা উল্লেখ করছেন, তাতে আর কারো বোঝার বাকি নেই, প্রতিবেশী দেশ কোনটি? মোদি বলেন, ‘পুরো বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশটি যদি এ কথা ভেবে থাকে, ষড়যন্ত্র করে ভারতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে, তা হলে তাদের এ স্বপ্ন ছেড়ে দেয়াই উচিত।
পাকিস্তান অবশ্য এ হামলার দশ ঘণ্টা পরে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে নিয়মমাফিক বিবৃতি ও নিজেদের দায় অস্বীকার ছাড়া আর তেমন কোনো কিছু জানানো হয়নি। ভারতকে অবাক করে চীনও প্রায় একই কাজ করেছে। সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানালেও তাতে পাকিস্তানকে কোনোভাবে দায়ী করা হয়নি। ফলে প্রত্যাশিত হলেও ক্ষুব্ধ হয়েছে ভারত। কারণ ভারত আশা করেছিল, কাশ্মিরে চালানো এ আত্মঘাতী হামলার কড়া প্রতিবাদ জানাবে সব দেশ।
ভারত অবশ্য এ মুহূর্তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই ধরনের পদক্ষেপকেই সামনে রাখছে। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানকে এক ঘরে দিতে চাইছে দিল্লি। পাকিস্তান হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া প্রতিবাদনও জানিয়েছে তারা।
কিন্তু এ মুহূর্তে সামরিক কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে মোদি সরকারকে ভাবতে হবে অনেকবার। কারণ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের চমকটা পাওয়া গেলেও ওই অভিযানের কার্যকারিতা আসলে কতটুকু ছিল, তা নিয়ে এখনো ভারতবাসী সন্দিহান। কারণ তারপরে উল্লেখযোগ্যহারে সন্ত্রাসী হামলা কমেছে বলে দেখা যায়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে দেয়া স্বাধীনতা কিভাবে ব্যবহার হবে তাই হয়তো চিন্তার বিষয় হয়ে উঠবে। সূত্র : ইকোনমিক টাইমস