৪ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে

আগামী ৪ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। ওই দিন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কমিশন সভা শেষে এই তফসিল ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে তফসিল ঘোষণার সময় জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারের জন্য বিটিভির মহাপরিচালকের কাছে ইসি দফতর থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

ইসির একাধিক কমিশনার এবং একাধিক ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৪ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে জানতে চাইলে ইসি কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী তার কার্যালয়ে বলেন, ‘৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তফসিল যখন ঘোষণা করা হবে, তার আগেই অনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

বিটিভিকে ৪ নভেম্বর সিইসির ভাষণ সম্প্রচারের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে তো কোনো কিছুই গোপন রাখা যায় না। আপনারাই ভালো বলতে পারেন।’

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মুখলেসুর রহমান বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর ইসির কমিশন সভা রয়েছে। তবে ওই দিন কমিশন সভা শেষে তফসিল ঘোষণা করা হবে কিনা, তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কমিশন সভাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে ইসি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সাক্ষাৎ করবে। সাক্ষাতের পর একটি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই কমিশন সভা শেষে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

ইসি সচিব আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের আগেও অরেকটি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে।

তবে ইসি সূত্র জানায়, আগামী ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আগামী ৪ নভেম্বর ইসির কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই দিনই সভা শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হলে ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে, অর্থাৎ ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর— এই তিন দিনের যেকোনো একদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আগের জাতীয় নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাধারণ তফসিল ঘোষণার পর ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর কমিশন সভা শেষে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল রকিব উদ্দিন কমিশন। সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৫ জানুয়ারি। ওই বছর, তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক সভা আগামী ৩১ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। ওই সভায় ১২টি আলোচ্যসূচি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— ভোটকেন্দ্র স্থাপনা মেরামত ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কার, পার্বত্য চট্টগ্রাম/দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী মালামাল পরিবহন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আনা-নেওয়া, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সহায়তা, ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ ইত্যাদি।

ইসির প্রস্তুতিমূলক এই সভার পরদিন ১ নভেম্বর বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার। সাক্ষাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে অবহিত করবেন তারা। কমিশন সূত্রগুলো বলছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ২ ও ৩ নভেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় ৪ নভেম্বর কমিশন সভার পর তফসিল ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী আগামী ৩০ অক্টোবরের পর ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top