১ আগস্ট ঈদ হলে সরকারের ব্যয় বাড়বে ‘১৪০ কোটি’ টাকা

এবারের ঈদুল আজহা ১ আগস্ট পালিত হলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে ১৩০-১৪০ কোটি টাকা। চাকরিজীবীদের নতুন বেসিক অনুযায়ী বেতন-বোনাস ও পেনশনারদে‌র পাওনা পরিশোধ বাবদ এ অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করেত হবে।

তবে ৩১ জুলাই কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হলে নিয়মানুযায়ী অতিরিক্ত এ সুবিধা না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সচিবালয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেছে।

সোমবার (৬ জুলাই) সরকারি চাকরিজীবীদের দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্থ সচিবকে দেওয়া আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার দুর্যোগকালে প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত নির্দেশনায় ও অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ-পরিচালনায় এবং সুদক্ষ পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি আজ এক সদৃঢ় কাঠামোয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেইসঙ্গে রিজার্ভ, রেমিটেন্স,অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি খাতে ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। এটা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যে মাসে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে তার পূর্ববর্তী মাসে আহরিত মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীর উৎসবভাতা হিসেবে প্রাপ্য হবে মর্মে সিদ্ধান্ত রয়েছে। পেনশনারদের উৎসব ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও পূর্ববর্তী মাসের আহরিত পেনশনের সমপরিমাণ উৎসবভাতা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ১ আগস্ট। সে মতে, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উৎসব জুলাই মাসে আহরিত মূল বেতন/পেনশন অনুসারে দেওয়া বেশি যুক্তিযুক্ত। যদি চাঁদ দেখার কারণে ঈদুল আজহার তারিখ এগিয়ে বা পিছিয়ে যায় তবুও মহামারি করোনার এ নাকাল অবস্থায় নতুন বেসিক অনুযায়ী উৎসব ভাতা পাওয়ার দাবি জানাচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীরা।

এর আগে গত রোববার (৫ জুলাই) অতিরিক্ত হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (হিসাব ও পদ্ধতি) মোহামম্মদ মমিনুল হক ভুঁইয়া ঈদুল আজহার বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে অর্থসচিবের কাছে চিঠি দেন।

এ বিষয়ে হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এবারের ঈদুল আজহা ১ আগস্ট হওয়ায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস নতুন বেসিক অনুযায়ী কার্যকর হবে। ঈদ কোনো কারণে একদিন আগে হলে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। অবশ্য সরকার চাইলে নতুন বেসিক অনুযায়ী দিতে পারে।

তিনি বলেন, এমন অবস্থায় কখনো পড়তে হয়নি। এ নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্ত জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অর্থসচিবকে লেখা হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, চাঁদ ওঠার ওপর ভিত্তি করে আসন্ন ঈদুল আজহা আগামী ৩১ জুলাই কিংবা ১ আগস্ট হতে পারে। ৩১ জুলাই ঈদ হলে সরকারি চাকরিজীবীরা ঈদ বোনাস পাবেন জুন মাসের সমপরিমাণ। যদি ১ আগস্ট ঈদ হয় তাহলে তারা বোনাস পাবেন জুলাইয়ের মূল বেতনের সমান।

২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের ১ জুলাই থেকে বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট কার্যকর হয়। ১ আগস্ট ঈদ হলে বোনাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি টাকা পাবেন তারা। তবে এখন কোন তারিখ ঈদ ধরে বোনাস দেওয়া হবে সেটা নির্ধারণে জটিলতায় পড়েছে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ও।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সময়মত কর্মকর্তা/কর্মচারী/পেনশনারকে উৎসব ভাতা দেওয়ার লক্ষে ন্যূনতম ১০ কর্মদিবস প্রয়োজন বিধায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দ্রুত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন বেসিক অনুযায়ী বেতন-বোনাস দাবি করেছে।

হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ১ আগস্ট ধরে বার্ষিক বর্ধিত বেতনসহ জুলাই মাসে গৃহীত মূল বেতন বা পেনশনের ভিত্তিতে ঈদুল আজহার উৎসবভাতা দেওয়া হবে। ঈদুল আজহা যদি ৩১ জুলাই হয় তাহলে পরবর্তী মাসের বেতন বা পেনশন থেকে তা সমন্বয় করা হবে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্যই অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Share this post

scroll to top