হেলথ অ্যান্ড ফিটনেস : রমজান মাসের ডায়েট প্ল্যান

যারা বডিবিল্ডিং কিংবা ফিটনেস সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা বেশ ভাল করেই জানেন, Diet is the ultimate thing; খাবার হচ্ছে আপনার দেহের জন্য ফুয়েল। জিমে গিয়ে কসরত করেন কিংবা নাই করেন, আপনাকে সবসময় মাথায় রাখতে হবে; আপনি যেমনটা খাবেন, আপনার স্বাস্থ্যও তেমনটাই থাকবে। ওজন কমানো, বাড়ানো কিংবা মেইনটেইন করা আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং লাইফস্টাইলের উপর পুরোপুরি ভাবে নির্ভর করে।

পবিত্র রমজান মাস চলে এসেছে, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনি মুসলিম হোন কিংবা অন্য ধর্মের অনুসারী, ফাস্টিং/উপোস/রোজা রাখা সব ধর্মেই পালন করা হয়। রোজা রাখা মানবশরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। জাপানের সেল বায়োলজি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি অহছুমি, সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরের কোষগুলো কীভাবে রিসাইকেল হয় এবং নতুন করে তাদের কার্যকারিতা বাড়ায় তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণা চলাকালীন তিনি লক্ষ্য করেন যে, ফাস্টিং কিংবা রোজা রাখার কারণে মানবশরীরের সেলগুলোতে অন্যরকম পরিবর্তন সংগঠিত হচ্ছে যা উপস্থিত থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলোকে ধ্বংস করছে এবং ক্ষতি হয়ে যাওয়া শরীরের অংশগুলোর কোষসমুহে নতুন করে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করছে। তিনি মানবশরীরের এই প্রসেসটিকে ‘অটোফেজি’ নামকরন করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই বৈজ্ঞানিক গবেষণার দরুন ২০১৬ সালের মেডিসিনের উপর তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হোন।

অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসের খাদ্যতালিকা এবং খাবারের সময়টা হচ্ছে ভিন্ন। রোজা থাকাকালে একেকজনের দেহ একেকরকম প্রতিক্রিয়া করে। কেউ এনার্জেটিক বোধ করেন; শক্তসামর্থ থাকেন। কেওবা বেশ দূর্বল হয়ে পড়েন। তাই খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি লাইফস্টাইলেও পরিবর্তন আনা বেশ জরুরি। রমজান মাসে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিমিত পানি পান এবং পর্যাপ্ত ঘুমের প্রতি বেশ নজর দিতে হবে। যারা ওজন কমাতে কিংবা বাড়াতে ইচ্ছুক; তাদের জন্য রয়েছে আমার পক্ষ থেকে ২টি ডায়েট প্ল্যান, যা সঠিকভাবে মেনে চললে ইতিবাচক এবং তৃপ্তিদায়ক ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি জিমে কিংবা বাসায় যদি এক্সারসাইজ করা যায় তাহলে পেশিগুলোর শেপ হবে সুন্দর এবং শারীরিক গঠন হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়, ইন-শা-আল্লাহ্।

যে কোন খাবারই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন, নয়ত তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই আমি পরামর্শ দিবো, খাবারগুলো ওয়েট স্কেল মেশিন ব্যবহার করে মেপে নিতে। এতে করে আপনি কতটুকু খাচ্ছেন, কত ক্যালরি ইনটেক হচ্ছে, কার্বস-প্রোটিন-ফ্যাটস কতটুকু নিচ্ছেন তা জানা অনেক বেশি সহজ হয়ে উঠবে।

যারা ওজন কমাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা-

ইফতারে যা খাবেন
খেজুর ২-৩ পিস, ফ্রুটজুস(চিনিছাড়া) ২০০/২৫০ মি.লি, চিকেন ২০০ গ্রাম, ২পিস ব্রেড, গ্রীন সালাদ (১০০ গ্রাম)

ডিনারে যা খাবেন
৩টি ডিম(কুসুমসহ), ভাত(১৫০ গ্রাম), যে কোনো মাছ(১৫০ গ্রাম), গ্রিন সালাদ (৫০ গ্রাম), সবজি (১০০ গ্রাম) এবং অ্যালমন্ড/কাঠবাদাম ১০-১৫ পিস।

সেহরিতে যা খাবেন
ওটস (৩০গ্রাম) / ২পিস ব্রেড, চিকেন (১৫০ গ্রাম) / লিন বিফ (১০০ গ্রাম), সবজি (১০০ গ্রাম), গ্রিন সালাদ (৫০ গ্রাম), দুধ (১০০ মি.লি), অ্যালমন্ড/কাঠবাদাম ১০ পিস।

উল্লেখ্য, খাবারগুলো রান্না করতে পরিমানমতো সানফ্লাওয়ার/অলিভ ওয়েল ব্যবহার করবেন। প্রতিনিয়ত ৩-৪ লিটার পানি পান করুন এবং নির্বিঘ্নে ৬-৭ ঘন্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন।

যারা ওজন বাড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা-

ইফতারে যা খাবেন
খেজুর ৩-৫পিস, ফ্রুটজুস ২৫০মি.লি, চিকেন ২৫০গ্রাম/লিনবিফ (২০০গ্রাম), ব্রেড ৩-৪ পিস, ডিম ৩টি।

স্ন্যাক্সে যা খাবেন-
ডিম ৫টি(৩টি কুসুমসহ, ২টি কুসুমছাড়া), ৩ চামচ পিনাট বাটার

ডিনারে যা খাবেন
চিকেন (২০০ গ্রাম), ভাত (২০০-৩০০ গ্রাম), সবজি (১০০ গ্রাম), অ্যালমন্ড/কাঠবাদাম ১৫-২০ পিস।

সেহরি
ভাত (২০০-৩০০গ্রাম) , ডিম ৩টি , মাছ (২০০গ্রাম), দুধ (২৫০মি.লি)

উল্লেখ্য, খাবারগুলো রান্না করতে পরিমানমতো সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করবেন। প্রতিনিয়ত ৩-৫ লিটার পানি পান করুন এবং নির্বিঘ্নে ৬-৭ ঘন্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন।

সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।

লেখক :

ফিটনেস ট্রেইনার ও পুষ্টিবিদ
অ্যাথলেট
বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশন
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ বডিবিল্ডিং এন্ড ফিটনেস।

Share this post

scroll to top