হাঁপানির রকমফের

মানব সমাজে হাঁপানির কথা জানা গেছে দুই শ’ বছরেরও আগে থেকে। গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস যেকোনো ধরনের শ্বাসকষ্টকে হাঁপানি নাম দিয়েছিলেন। গ্রিক ভাষায় অ্যাজমা শব্দের অর্থ হলোÑ ‘হাঁপ ধরা’ অথবা ‘হ্যাঁ করে শ্বাস টানা’। শুরুতে যেকোনো ধরনের শ্বাসকষ্টকে হাঁপানি বলা হতো। আর হাঁপানি এমন একটা রোগ, যা প্রাণনাশক না হলেও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।
যে সব কারণ হাঁপানি সৃষ্টির জন্য দায়ী, তাদের ওপর ভিত্তি করে হাঁপানির শ্রেণিি বভাগ করা সম্ভব। এর ফলে রোগীর চিকিৎসায় সুবিধা হয়।

অ্যালার্জি বা বাইরের কারণজনিত : সাধারণত ধুলাবালু, বিভিন্ন ফুলের গন্ধ এবং পরাগরেণু, নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য এবং ছত্রাক যা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী জিনিস দিয়ে সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং জন্ম থেকেই এদের হাঁপানি হওয়ায় প্রবণতা থাকে।

অনেক সময় এসব রোগীর অ্যালার্জির অন্যান্য উপসর্গও দেখা যায়। যেমনÑ বারবার হাঁচি, নাক দিয়ে পাতলা পানি পড়া, চর্মরোগ প্রভৃতি। অ্যালার্জির জন্য সচরাচর ব্যবহৃত ওষুধে এদের উপকার হয়। জীবনের প্রথম অবস্থায় এরূপ হাঁপানি হয়।

স্প্যাজমোটিক বা ভেতরের কারণ : এ ধরনের রোগীর অ্যালার্জির কোনো ইতিহাস থাকে না। ফুসফুস বা শ্বাসনালীর আগের কোনো রোগের জন্য হাঁপানি সৃষ্টি হয়। যেমনÑ অতীত সংক্রমণ বা পুরনো ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি। জীবনের শেষ দিকে অর্থাৎ বেশি বয়সে এরূপ হাঁপানি হয়। এই দুই প্রকার রোগেই রোগীর শ্বাসনালীর পথ স্বাভাবিক অবস্থার থেকে সরু হয়ে যায়। ফলে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশের পথে বাধার সৃষ্টি হয় এবং এর ফলেই শ্বাস-প্রশ্বাসে টান পড়ে এবং শ্বাস নিতে রোগীর দারুণ কষ্ট হয়। ফলে এই সময় দেখা যায় রোগীর শ্বাসকষ্ট, গলায় সাঁই সাঁই আওয়াজ। বুকে চাপবোধ ও কাশি উঠতে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর জীবনে আরও বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়, যেমনÑ মৃত্যুভয়, শ্বাসকষ্ট, দম আটকে আসা, দম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভয়ে শুতে অনিচ্ছা, রাত্রিকালে বিশেষ করে শেষ রাতে রোগের বৃদ্ধি। হাঁপানির সাথে ব্রঙ্কাইসিস থাকলে তো কথাই নেই। কাশতে কাশতে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা গলায় নিঃসৃত হয় বলে শ্বাসনালী আরো সঙ্কীর্ণ হয়ে যায় আর এর ফলে হাঁপানির টান বহুগুণ বেড়ে যায়। আরও দেখা যায়, ফুলের পরাগরেণুু, আবহাওয়ায় তারতম্য, দূষিত বাতাস প্রভৃতি কারণেও হাঁপানির কষ্ট বাড়ে। ধূমপান, কাঁচা রঙের গন্ধ, ধুলাবালু প্রভৃতিও হাঁপানির জন্য দায়ী।
হাঁপানির প্রকারভেদে তার চিকিৎসা করলে কষ্টের কিছুটা উপশম হয় খুব তাড়াতাড়ি। অ্যালার্জিজনিত হাঁপানির বেলায় যে সব জিনিসে রোগীর শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে তা পরিহার করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। এ ছাড়াও আরেক ধরনের হাঁপানি আছে, তাকে বলা হয় ব্যায়ামজনিত হাঁপানি। যারা ঠাণ্ডা স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে শারীরিক ব্যায়াম করেন তাদের এ ধরনের হাঁপানি হয়ে থাকে।

লেখক : অধ্যাপক ও অ্যালার্জি ও অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ, দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার
৪৩ আর/৫সি পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।

Share this post

scroll to top