হজের বিমান ভাড়া এবারো দ্বিগুণের বেশি

হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া চলতি বছর গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমানোর পরও সাধারণ সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশিই থেকে যাচ্ছে। এ বছরও হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বাবদ গুনতে হবে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

বর্তমানে ওমরাহ যাত্রীদের যাওয়া-আসার বিমান ভাড়া ৫২ হাজার টাকা। হাব নেতারা হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাখ টাকার নিচে নামিয়ে আনার দাবি অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া থার্ড ক্যারিয়ার চালুর দাবিও রয়েছে।

থার্ড ক্যারিয়ার চালুর ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে বিমান ভাড়া আরো কমানো এবং হজ প্যাকেজের মেয়াদ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভবপর বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। গতকাল সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে হজের বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর বিকেলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিমান ভাড়া গত বছরের ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা থেকে ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমানোর বিষয়টি জানানো হয়। ফলে এ বছর হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা যুক্ত হবে। এই ভাড়া ২০১৭ সালের চেয়ে ৪ হাজার টাকার মতো বেশি হবে। ওই বছর বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা।

হাবের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতি গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমান ভাড়া ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমানোর পরও ভাড়া সাধারণ সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশিই থেকে যাচ্ছে। বিমান ভাড়া ১ লাখ টাকার নিচে কমিয়ে আনার জন্য আমাদের দাবি অব্যাহত থাকবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে মাওলানা ইয়াকুব শরাফতিও উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে হাবের সভাপতি আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়া ও মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমসহ হাবের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।

হাব নেতারা বৈঠকে বিমান ভাড়া কমানো এবং আদালতের নির্দেশনার আলোকে থার্ড ক্যারিয়ার চালুর দাবি জানিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে বিমান ভাড়া গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমানো হলেও থার্ড ক্যারিয়ারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানান হাব নেতারা।

মাওলানা ইয়াকুব শরাফতি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। কারণ বিমান ভাড়ার কারণেই হজযাত্রীদের প্যাকেজ মূল্য বেড়ে যায়। হাব নেতাদের মতে, থার্ড ক্যারিয়ার তথা সৌদি এয়ার লাইন্স ও বাংলাদেশ বিমানের বাইরে অন্য কয়েকটি বিমান সংস্থাকে হজযাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিলে প্যাকেজের সময় ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে কমিয়ে আনা সম্ভব।

কিন্তু মাত্র দু’টি বিমান সংস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে হজযাত্রীদের ৩০ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত সৌদি আরবে অবস্থান করতে হয়। এতে থাকা খাওয়ার খরচ যেমন বাড়ে তেমনি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ছুটিরও সমস্যা হয়।

হাবের দাবি উপেক্ষা করেই গত বছর হজযাত্রীপ্রতি বিমান ভাড়া ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছিল। যা ২০১৭ সালের চেয়ে ১৩ হাজার টাকা বেশি ছিল। ২০১৭ সালে বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা। এ বছর ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমানোর পরও গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা বেশিই থাকছে।

পরিসংখানে দেখা যায়, ২০০৮ সালে বিমান ভাড়া ছিল ৯৮ হাজার ৯৭০ টাকা, ২০০৯ সালে ৯২ হাজার ২৭০ টাকা, ২০১০ সালে ৯৬ হাজার ৪২৫ টাকা, ২০১১ সালে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৫০ টাকা, ২০১২ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬২০ টাকা, ২০১৩ সালে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩ টাকা, ২০১৪ সালে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৪ টাকা, ২০১৫ সালে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৮৭ টাকা, ২০১৬ সালে ১ লাখ ২২ হাজার ৬৬৫ টাকা।

গত বছর বিমান ভাড়া বৃদ্ধির পর হাবের পক্ষ থেকে কমানোর জোর দাবি জানিয়ে বলা হয়েছিল যেন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হজের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে হাবের মহাসচিব মো: শাহাদাত হোসাইন তসলিম দাবি তুলে ধরে বলেছিলেন, বাংলাদেশ বিমান নিজেরা তাদের ভাড়া নির্ধারণ করে। অথচ এটা করা উচিত ছিল তৃতীয় কোনো কাউকে দিয়ে। নিয়মানুযায়ী এটা তারা করতে পারেন না। এজন্য এভিয়েশন সম্পৃক্ত অন্য বিশেষজ্ঞদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। আর তা হবে সঠিক।

তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, যেখানে ভারতে এ বছর বিমান ভাড়া গত বছরের চেয়ে কমানো হয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে বিমান ভাড়া বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায় সিদ্ধান্ত। তিনি বলেছিলেন, জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি কিংবা ভ্যাট প্রয়োগের অজুহাতে বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সসহ অন্যান্য এয়ার লাইন্সে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা আসা-যাওয়ার বর্তমান ভাড়া সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে ৩৮ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ওমরাহ যাত্রীদের আসা-যাওয়ার ভাড়া ৪৯ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকা। হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে যেহেতু বিমানকে এক পথে খালি আসতে হয় সেজন্য হজযাত্রীদেব বিমান ভাড়া সর্বোচ্চ দ্বিগুণ অর্থাৎ ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

তাছাড়া প্রায় সারা বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সাধারণত ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ফাইট পরিচালনা করে থাকে। অথচ হজের সময় প্রায় ১০০ ভাগ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট পরিচালিত হয়। হজের সময় প্রচার খাতসহ আরো অনেক খাতে বিমানের খরচ কমে যায়।

এ দিকে গতকাল বিমান ভাড়ার বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার পর আগামী ২১ জানুয়ারি বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই চলতি বছরের হজ প্যাকেজ ও হজনীতি উপস্থাপন ও অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কোনো কারণে সম্ভব না হলে দ্বিতীয় মন্ত্রী সভার বৈঠকে পেশ করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে চলতি বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হতে পারে।

হজ কার্যক্রমের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় যে বার্ষিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে তাতে গত ১৫ জানুয়ারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এই ঘোষণা কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।

১০ হাজার ১৯১ টাকা কমানোর ঘোষণা : গতকাল বিকেলে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলী এবার যাত্রীপ্রতি হজের বিমান ভাড়া কমিয়ে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা করার কথার জানান।

গতকাল বিকেলে বেসামরিক বিমান পরিবহনও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে হজ সম্পর্কিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাশেষে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানিয়েছেন। এ সময় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিমান ও পর্যটন সচিব মহিবুল হক, ধর্মসচিব আনিছুর রহমান, হাব ও আটাবের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহবুব আলী বলেন, সুন্দর ব্যবস্থাপনায় যাতে যাত্রীরা হজ করতে পারেন, সেজন্য বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব পালন করবে। ইতোমধ্যে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সবার বক্তব্য শুনেছি। সবার প্রচেষ্টায় আমরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে পারি।

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিমান ভাড়া কমার প্রসঙ্গে বলেন, আমি জানি, বিমান প্রতিমন্ত্রী অনেক দয়ালু এবং ভদ্র মানুষ। তিনি আমাদের কথা রেখেছেন, সে জন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি বলেন, হজযাত্রীদের চোখ দিয়ে যারা পানি ঝরাবে, তাদের চোখ দিয়ে আমরা রক্ত ঝরিয়ে ছাড়বো। এটা আমার পরিষ্কার কথা। এক্ষেত্রে আশা করি, হজ সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক থাকবেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top