স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নির্দেশে আ.লীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম!

চুয়াডাঙ্গায় পূর্বশত্রুতার জেরে আলম হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি রেলগেট মোড়ে রনোর চায়ের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় আলমকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। জখম আলম হোসেন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুসলিমপাড়ার সুরুজ আলীর ছেলে ও পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত।

জানা যায়, ২০১৮ সালে বেলগাছি রেলগেট মোড়ে কয়েক ব্যক্তি আলমকে কুপিয়ে জখম করেন। এ ঘটনায় আলম থানায় মামলা করেন। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে। এই মামলার জের ধরেই গতকাল রাত ৮টার দিকে বেলগাছি রেলগেট মোড়ে অবস্থিত রনোর চায়ের দোকানের সামনে ১০-১২ জনের একটি দল এসে আলমকে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা আলমকে দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। গতকাল রাতেই পরিবারের সদস্যরা আলমকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

রক্তাক্ত জখম অবস্থায় আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘সন্ধ্যায় বেলগাছি রেলগেট মোড়ের একটি কেরাম বোর্ডের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ করেই শান্তিপাড়ার গুণ্ডুর ছেলে জনিসহ ১০ থেকে ১২ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাকে তাড়া করে। আমি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে রনোর চায়ের দোকানের সামনে তারা আমাকে ধরে ফেলে এবং সবাই মিলে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকলে আমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার আর কিছু মনে নেই। তবে আমি শান্তিপাড়ার জনিকে জ্ঞান হারানোর আগে চিনতে পেরেছি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহানা আহমেদ বলেন, ‘শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর জখম হওয়া এক ব্যক্তিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন কিছু মানুষ। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ফুসফুসে আঘাতসহ ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি রেলগেট মোড়ের একটি চায়ের দোকানের সামনে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করেছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের আটক করতে পুলিশ জোর অভিযান চালাচ্ছে।’

এদিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের ই-মেইল থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলম হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক পৌর মেয়র জিপুর নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য গাজী ইমদাদুল হক সজল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গুন্ডুর ছেলে জনিসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। গুরুতর জখম আলমকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন।

আলমকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার উদ্দেশে হাসপাতাল ত্যাগ করলে ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্যরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি সদর হাসপাতাল রোড ও কবরি রোড হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত দলীয় কার্যালয়ে এসে এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়।

৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান তালুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম ইন্দা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবলীগ নেতা আব্দুর রশিদ, সাবেক সভাপতি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রেজাউল করিম, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহাবুল হোসেন, সাবেক সহসভাপতি রুবায়েত বিন আজাদ সুস্থির, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক, পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি জাবিদুল ইসলাম জাবিদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, একের পর এক ন্যাক্কারজনক হামলা ঘটিয়ে চলেছে বর্তমান মেয়রের সন্ত্রাসী বাহিনী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফসহ তার চিহ্নিত ক্যাডাররা। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের নেতার নির্দেশে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আছি। আশা করি, প্রশাসন দ্রুত সকল আসামিদের গ্রেফতার করবে। একই সঙ্গে এই হামলার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জিপু চৌধুরীসহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারের দাবি জানান বক্তারা।

বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ জোয়ার্দ্দার, সাবেক সহসম্পাদক বাপ্পি, সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা অয়ন হাসান জোয়ার্দ্দার, বরকত জোয়ার্দ্দার, সাবেক স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আহম্মেদ জিম, তানভির আহম্মেদ সোহেল, সদর থানা ছাত্রলীগ নেতা রেদওয়ান আহম্মেদ রানা, মোমিন, টোকন, জান্নাত, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রানা, সাধারণ সম্পাদক ওয়াসি হাসান রাজিব, পৌর ছাত্রলীগের নেতা এমদাদুল হক আকাশ, রামিম, নোমান, দিপু, তাজ, মিরাজ, হারুন, যুবলীগ নেতা সাঈদ, মণ্টাসহ ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান হিমেল মল্লিক।

Share this post

scroll to top