স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি সন্তুষের

দেশ স্বাধীন হয়ে পার হয়েছে ৫০ বছর। তবুও মন্ত্রণালয়ের গেজেটে নাম আসেনি ১৯৭১ এ দেশ স্বাধীনে অংশ নেওয়া সম্মুখ সারির সাহসী যোদ্ধা সন্তুষ কোমার বসা‌কের। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় তি‌নি বঞ্চিত হচ্ছেন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে। জীবনের শেষ সময়ে এসে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে তালিকায় নিজের নাম দেখতে চান দেশ মাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়া এই মুক্তিযোদ্ধা।

দেশকে স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাদেরকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান (মুক্তিযোদ্ধা) হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্মান না পাওয়ায় তি‌নি আজ হতাশার সাগ‌রে হাবুডুবু খা‌চ্ছেন।
স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর একাত্তরের টগবগে যুবক এখন বয়সের ভারে খুব একটা চলতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হয়নি। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় তিনি বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন না তিনি। ৬৬ বছর বয়সী সন্তুষ কোমার বসাক অলস সময়ে ঝাপসা চোখে এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করেন।

জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে জন্ম গ্রহণ করা সন্তুষ কোমার বসাক ময়মন‌সিংহ জেলার গৌরীপুর উপ‌জেলার সহনা‌টি ইউনিয়নের পাত্রাইল গ্রামের মৃত সুধন্ন কোমর বসা‌কের ছেলে। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তার বয়স ৩১ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অন্যদের সঙ্গে তিনিও ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। অ‌ধিনায়ক মেজর জেনা‌রেল আ: সামাদের ত্বতাবধা‌নে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তুরা ক্যাম্প থেকে সেক্টর কমান্ডার ক‌র্নেল আবু তা‌হে‌রের নেতৃত্বাধীন ২০ দিনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে ১১ নং সেক্টরে ময়মন‌সিংহের হালুয়াঘাট ও না‌লিতাবা‌ড়ি এলাকায় পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। তার সহযোদ্ধা ছিলেন মো. আব্দুল মান্নান (লাল মুক্তিবার্তা নং- ০১১৫১১০০৭১, গে‌জেট নং -৬৩২), মো. সুরুজ আলী (লাল মুক্তিবার্তা নং-০১১৫১১০১৬৫, গে‌জেট নং- ৭৩২), এ‌কেএম রিয়াজুল্ ইসলাম (লাল মুক্তিবার্তা নং- ০১১৫১১০৩০২, গে‌জেট নং-৬৩০)।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গৌরীপুর উপ‌জেলায় নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার পরেও অজানা কারণে সুফল পাননি তিনি। প‌রে তি‌নি স্থানীয় যাছাই-বাছাই ক‌মি‌টির সিদ্ধা‌ন্তের বিরু‌দ্ধে জাতীয় মু‌ক্তি‌যোদ্ধা কাউ‌ন্সিল চেয়ারম‌্যান বরাব‌রে আপী‌লের আ‌বেদন ক‌রেন। অব‌শেষ ৭৬তম জাসুকা সভার সিদ্ধান্ত ম‌তে স্বারক নম্বর ৮৪.০২.০০০০.০০২.০০.০১১.১৪/৪৯৭ এ
২০২১ সা‌লের ১৯ ডি‌সেম্বর জাত‌ীয় মু‌ক্তি‌যোদ্ধা কাউ‌ন্সিল স‌ম্মেলন ক‌ক্ষে উপ‌স্থিত থাকার জন্যে ‌নো‌টিশ প্রদান করা হয়। প‌রে তি‌নি নির্ধা‌রিত সময় প্রয়োজনীয় দা‌লি‌লিক প্রমাণা‌দিসহ আপীল শুনা‌নি‌তে অংশ গ্রহন ক‌রেন। কিন্তু অদ‌্যব‌ধি তি‌নি কোন সুখবর পাননি। ইতোমধ্যে শারীরিক নানা জটিলতায় শরীরে বাসা বেঁধেছে অসুখ। জীবন সায়াহ্নে এসে এখনও তিনি কেবলমাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান।

তার সন্তান ঝুটন কোমার বসাক বলেন, আমার বাবা ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দীর্ঘদিন তার কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও কোন কাজ হয়নি। সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য অনেক সহযোগিতা করছে। আমাদের দাবী বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি যেন দিতে পারি এই আমাদের চাওয়া। গেজেটে যেন তার নামটি প্রকাশ করা হয়।

সন্তুষ কোমার বসাক ব‌লেন, দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমার সহ‌যোদ্ধাগণ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেলেও আমার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মিলেনি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও। মৃত্যুর আগে আমি কি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাব না? এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাসান মারুফ জানান, এ ব্যাপারে আমার কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তথ্য পেলে তা যাচাই বাছাই করবো। এবং সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রক্রিয়া চালাবো।

গৌরীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর র‌হিম বলেন, শ্রী সন্তুষ কোমার বসাক স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার যে প্রমাণাদি রয়েছে, এতে তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এর কোনো সন্দেহ নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া এখন তার অধিকার।

Share this post

scroll to top