সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যু এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া

প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় সাংস্কৃতির মিল আছে। সেই সূত্রেই ভারতের ছবির প্রতি বাংলাদেশের দর্শকদের টান। তাই সঙ্গত কারণেই ওখানকার শিল্পীদের বিদায়ের খবরে কষ্ট পায় এদেশের দর্শক। কিন্তু রোববার সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে মনে হয় একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন আসে কেন? কারণটা হলো তার শেষ সিনেমা ‘ছিছোড়ে’।

ওই ছবিতে সুশান্ত শিখিয়ে ছিলেন, ‘কখনো হেরে যেতে নেই; সুইসাইড কোনো কিছুর সমাধান হতে পারেনা’। অথচ ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে শেষমেষ আত্মহত্যা করলেন তিনি নিজেই। ক্যারিয়ারের সূর্য যখন উড্ডয়মান, ঠিক তখন জীবনের সূর্য অস্তমিত হলো বলিউডের এই তারকার। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে জীবন প্রদীপ নিভে গেল প্রতিভাবান এই অভিনেতার। রোববার (১৪ জুন) মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতে তার বাড়ি থেকে সুশান্ত’র ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই, ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের দর্শকরা সামাজিক মাধ্যমে বিস্ময়ের সাথে শোক প্রকাশ করেছেন। জানাগেছে, বিগত ছয়মাস ধরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন চলছিল, ছিলেন তিনমাস গৃহবন্দী। এরমধ্যেই এলো মৃত্যুর খবর। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তার এই চলে যাওয়াকে আত্মহত্যা বলতে রাজি নন। তাদের মতে, সুশান্ত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তবে আসল ঘটনা কি সেটা হয়তো সময়ই বলে দিবে।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ ‘সময়’ নামের একটি কবিতা লিখেছেন। যেখানে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, মিলাতে না পারলে সময় তার আপন গতিতে প্রতিশোধ নিয়ে এগোতে থাকে।

ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ নামের একজন সংবাদিক লিখেছেন, হ্যাঁ সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন। বিগত ছয়মাস ধরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন চলছিল, তিনমাস গৃহবন্দী। মাত্র ৩৪ বছর বয়স ছিল। সাফল্য, অর্থ, শিক্ষা সব ছিল৷ ফিটনেস ফ্রিক, আড্ডাবাজ, পজিটিভ, দিল্লির ইঞ্জিনিয়ার থেকে মুম্বাইয়ের তারকা। লাখ লাখ মেয়ের নয়নের মনি। পারে এভাবে জীবন শেষ করে দিতে?

এই হাসিখুশি ছেলেটার কোনো ডিপ্রেশন থাকতে পারে? সিরিয়ালের এতো জনপ্রিয়তা, ‘কাই পো চে’র মতো ছবি, ব্যোমকেশ বক্সী, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো চরিত্র, শেষ ছবি ব্লকব্লাস্টার ‘ছিছোড়ে’। গোটা ছবিটা আত্মহত্যার বিরুদ্ধে, জীবনকে উদযাপন করা নিয়ে। এই ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে?

পারে। আর তাই কথা বলুন। কথা বলুন একে অপরের সাথে। কারোর মনখারাপ শুনে ওকে একা ছেড়ে দেবেন না। ওকে মেসেজ করুন, খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন। মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রয়োজনীয়। কার মনে কী চলছে কেউ বলতে পারেনা। কিন্তু আমরা চেষ্টা করতে পারি৷

২০২০ নৃশংস একটা বছর। খারাপ খবর, মর্মান্তিক খবর সাধারণ, নিয়মিত জিনিস হয়ে গেছে। অন্ধকার সময়। আরো অন্ধকার হয়ে পরছে চারপাশ। ডিপ্রেশন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে রোম্যান্টিকতা না, লড়াই করে বের করে আনতে হবে।

এই সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা যারা আছেন, আমার লেখা পড়েন, প্লিজ মনখারাপে, হতাশায়,একা লাগলে মেসেজ করুন। আমি, আমরা কেউ খারাপ ভাববো না। ডিপ্রেশন হলে হাত বাড়িয়ে দিন। ডিপ্রেশন খুব সাধারণ এক বিষয়, লুকোবেন না। আপনার গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করলে গান, টিকটকে ভিডিও বানাতে ইচ্ছে করলে বানান, যা ভালো লাগছে করুন। কোরোনার সাথে সাথে ডিপ্রেশনের বিরুদ্ধে ও আমাদের লড়তে হবে।

চলুন আমরা সবাই মিলে ঝলমলে রোদ আষ্টেপৃষ্টে রেখে দেবোই। অন্ধকারকে গ্রাস করতে দেবো না, দেবো না, দেবো না। প্লিজ আরো বেঁধে বেঁধে থাকি। প্লিজ একে অপরের সাথে মাঝরাতে কথা বলি খুব অসহায় লাগলে।

সুবর্ণা মুস্তফা লিখেছেন, কি একটা প্রতিভা নস্ট হয়ে গেল। সুশান্ত সিং রাজপুত আর নেই। সে আত্মহত্যা করেছে। হায় কি অপচয়। তার পরিবারে প্রতি গভীর সমবেদনা।

ফটোগ্রাফার রিনা মাহমুদ লিখেছেন, সব ব্যাধির মতো ডিপ্রেশনও একটা মারাত্মক অসুখ। ডিপ্রেশনের মেডিসিন নিচ্ছিলো টিভিতে দেখলাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন আমিন।

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন, ‘বিষন্নতা একটি রোগ। অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।’ এই বক্তব্যের একটি এ্যাড বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেখাতো,‘সিবা গেইগি’র, সেই নব্বই দশকে! অথচ বিষন্নতা নিয়ে কথা বলা, বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়া আমাদের দেশে এখনও একটা ট্যাবু! আমার নিজ পরিবারে বিষন্নতায় ভোগা সদস্যকে আমি ডাক্তারের কাছে নিতে পারিনা তার অনিচ্ছার কারণে। ‘সাইক্রিয়াটিস্ট’ এখনো অনেকের কাছে পাগলের ডাক্তার হিসাবে সমাদৃত! বিষন্নতা’র শেষ পরিণতিই বুঝি হলো সুশান্ত সিং রাজপুত এর! ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ/ মরিবার হলো তার সাধ।’ কবিতায় শুনতে ভালোই লাগে! অথচ জীবনের স্বাদ নেয়া এখনও কত বাকি!

Share this post

scroll to top