সুনামগঞ্জের ৬ উপজেলায় বন্যা, যান চলাচল ব্যাহত

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

শনিবার (২৭ জুন) বেলা তিনটায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। সুরমা নদীর পানি তীর উপচে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। ঢলের পানি শহরে প্রবেশ করায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক এবং সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪১০ মেট্রিক টন চাল এবং ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতে গত ৭২ ঘণ্টায় ৯০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।

সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা ১৯০ মিলিমিটার এর আগের ৭২ ঘণ্টায় ২৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার, উকিলপাড়া, কাজীর পয়েন্ট, মাছবাজার, সবজিবাজার, ষোলঘর, নবীনগর, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী এলাকার মূল সড়কে হাঁটু পানি রয়েছে।

এদিকে ছাতক উপজেলার পৌর শহরের কিছু এলাকা এবং উপজেলার আরও পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ ভবন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ ও হাটবাজার প্লাবিত হয়েছে।

পৌরশহরের বাসিন্দা এনামুল হক চৌধুরী রুমেন বলেন, ‘শহরের কাজির পয়েন্ট, মধ্যবাজার, ঘোলঘর এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পানি রয়েছে। অনেক কষ্টে সড়ক দিয়ে যেতে হচ্ছে। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।’

মোটরসাইকেল চালক জুবায়ের আহমদ বলেন, ‘তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কে অনেক পানি। গাড়ি চলাচল করতে পারে না। সড়কের অনেক জায়গায় গলা পানি পর্যন্ত আছে। জরুরি প্রয়োজনে তাহিরপুর যেতে হয় কিন্তু যানচলাচল বন্ধ হওযায় এখন নৌকা নিয়ে যেতে হচ্ছে।’

কালী বাড়ি এলাকার বাসিন্দা সম্রাট হোসেন বলেন, ‘শহরের অনেক বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। ঘরের মধ্যে দেড় থেকে দুই ফিট পানি আছে।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পানির উপর রয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়বে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্চিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জে পানি আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪১০ মেট্রিক টন চাল এবং ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো উপজেলায় জরুরি প্রয়োজন হলে আশ্র কেন্দ্র খোলার জন্য সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুনামগঞ্জ পৌরশহরের মূল সড়কেও বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং জেলার আরও ছাতক-জামালগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার সড়ক ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।’

Share this post

scroll to top